chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

এমআরআই ও ম্যামোগ্রাফিতে সুখবর নেই

চমেক হাসপাতাল

দেশের ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। সেই সেরা হাসপাতালে রেডিওলোজি বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে ম্যামোগ্রাফি ও এমআরআই নামে কোটি টাকার দুই মেশিন অচল। এ দুই পরীক্ষা বেসরকারীতে করাতে পকেট কাটা যাচ্ছে রোগীদের। সরকারি কম খরচে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় ২০১৬ সালে মেশিনটি ১২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় কেনা হয়। গত ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট রেডিওলজি বিভাগে এমআরআই মেশিনটি বসানো হয়। মেশিনটির ওয়ারেন্টি মেয়াদ ছিল তিন বছর। ফলে গত ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে গত ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর মেশিনটিতে ত্রুটি দেখা দিলে সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটি মেরামতের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডকে জানালে তারা মেরামতের জন্য ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাহিদাপত্র পাঠায়। পরে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পরে মেডিটেল কোম্পানি মেশিনটি মেরামত করে।

২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিরবচ্ছিন্ন সেবা পেতে সিএমসি করার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দ্বিতীয় বার চিঠি দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৯ মার্চ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এক বছরের সিএমসি বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার ডলার দাবি করে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল মেশিনটিতে আবার ত্রুটি দেখা দেয়। মেরামতের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়। তারা এসে দেখতে পায় মেশিনের ম্যাগনেটের প্রেশার অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় কার্যকারিতা নষ্ট হচ্ছে। ফলে যন্ত্রটি সচল রাখার জন্য যন্ত্রাংশটির রিপ্লেসমেন্ট করা প্রয়োজন। যন্ত্রাংশটির বাজারমূল্য ছিল ৫৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তখনো মেশিনটি চালু ছিল, রোগীদের সেবা দেওয়া যেত। কিন্তু গতবছরের মে মাস থেকে এমআরআই মেশিনটির সেবা বন্ধ রয়েছে। চমেক হাসপাতালে ৪ হাজার টাকায় এমআরআই করা যেত। কিন্ত বেসরকারীতে সর্বনিম্ন ৯ হাজার টাকা খরচ হয়।

এমআরআই মেশিন মেরামতের প্রসঙ্গে চমেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান চট্টলার খবরকে বলেন, ‘গত বছরে মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড ৫৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকার একটা যন্ত্রাংশ লাগিয়ে যায়। সম্পূর্ণ ঠিক করতে দরকার আরও ৪০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুয়ায়ী করমূল্যের ৬.৫ শতাংশ দিতে হয়। তারা বর্তমানে ১০ শতাংশের উপরে চাইছে। যার জন্য কম্পিয়নশিপ মেইনটেনেস কমপ্লেক্স (যন্ত্রাংশ সংরক্ষণ ও মেরামত সংক্রান্ত চুক্তি) হচ্ছে না। সেটি হলে মেশিনটি কোম্পানি নষ্ট হওয়া মাত্র ঠিক করবে। তার জন্য মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিবছর চাইছে ৯৪ লাখ ৫০ হাজার। যদি চুক্তি অনুযায়ী ৬.৫ শতাংশ হয় তাহলে ৬৩ লাখ টাকা দিতে হতো। কিন্ত তারা ২৯ লাখ টাকা বেশি দাবি করছে। কিন্তু সরকার এত বাড়তি টাকা দিতে চাইছে না। যার জন্য সচলও হচ্ছে না। আদৌ হবে কিনা আমরা জানি না। এটা সম্পূর্ণ সরকারের সিদ্ধান্ত।’

অন্যদিকে নারীর স্তনে টিউমার–ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত ম্যামোগ্রাফি মেশিনও অচল। যা প্রায় এক বছর ধরে পড়ে আছে।  কখনও ফিল্ম সংকট, কখনও যান্ত্রিকত্রুটি আবারও কখনও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার অভাবে এই মেশিন অচল। চমেক হাসপাতালে আনার প্রায় দেড় বছর পর মেশিনটি ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা চালু করা হয়।  কয়েক মাস সেবা অব্যাহত থাকে। এরপর টানা ২ বছর বন্ধ থাকে সেবা। পরে ২০২১ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে মেশিনটির সেবা চালু হয়। কয়েক মাস সেবা দিয়ে ফের ২০২২ সালের শুরুতে অচল হয়। এরপর আর সচল করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই ম্যামোগ্রাফি দিয়ে চমেক হাসপাতালে ৪০০-৮০০ স্তন পরীক্ষা করতে পারেন রোগীরা ।কিন্ত তা অচল থাকায় ১৫০০-৩০০০ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।

ম্যামোগ্রাফি সচল করার প্রসঙ্গে চমেক পরিচালক বলেন, মেশিনটির অচল রয়েছে দীর্ঘদিন। আমরা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দফায় দফায় চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্ত তারা আমলে নিচ্ছেন না। শুধু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নয় মন্ত্রণালয়কেও চিঠি উপর চিঠি দিয়ে যাচ্ছি । কোন প্রকার সাড়া পাচ্ছি না। হাসপাতালে এত বরাদ্ধও নেই , যা দিয়ে আমরা মেশিনের রোগ সারাতে পারবো।

নচ/চখ