chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অশান্ত মণিপুর, নিহত ১৬

ভারতের একটি রাজ্য মণিপুর।জাতে জাতে সংঘাত বেড়েছে।রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হাতাহাতি মারধর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট এমনকি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটেছে। সহিংস এলাকাগুলোয় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্র-রাজ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষকে উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছেন বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন মণিপুর রাজ্য পুলিশের মহাপরিদর্শক পি ডউঙ্গেল।

এছাড়া মণিপুর থেকে এক হাজারেরও বেশি মানুষ পার্শ্ববর্তী রাজ্য আসামের কাছাড় জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন কাছাড়ের এসপি। কারফিউ ও দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, মণিপুরে রাজনৈতিক বা জাতিগত উত্তেজনা নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক এই উত্তেজনা ছড়িয়েছে কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে। প্রায় এক দশক ধরে নানাভাবে মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইরা আইনিভাবে তপশিলি উপজাতি বা ‘শিডিউলড ট্রাইব’হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের বক্তব্য, স্বাধীনতার আগে স্বাধীন মণিপুর রাজ্যে তাদের ‘উপজাতি’হিসেবেই স্বীকৃতি ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর তাদের এই তকমা কেড়ে নেওয়া হয়। ফলে জমি থেকে ঐতিহ্য, ভাষা, পোশাক সবকিছুতেই স্বকীয়তা বজায় রাখার যে সুবিধাগুলো তপশিলি উপজাতিরা পেয়ে থাকেন, তারা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই মর্মে তারা আবেদন করেন মণিপুর হাইকোর্টে।

সব আবেদন শুনে রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারীদের দাবি-দাওয়া যথাযোগ্য গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে রাজ্যের অবস্থান জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এতে চটে যায় মণিপুরের বাকি উপজাতিরা। তাদের বক্তব্য, এতে অন্যায়ভাবে সুবিধে পেয়ে যাবেন মেইতেইরা এবং তাতে ক্ষতি হবে নাগা, কুকিসহ বাকি উপজাতি গোষ্ঠীগুলো।

তাদের অভিযোগ, এমনিতেই মেইতেইরা যথেষ্ট অগ্রসর। রাজ্যের বেশিরভাগ বসতি যেহেতু উপত্যকায়, বিধানসভার আসনও বেশিরভাগ ওখানেই। মেইতেইরাও বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। মেইতেই ভাষাকে সংবিধানের বাইশটি সরকারি ভাষার একটির মর্যাদাও দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মেইতেইরা বেশিরভাগ হিন্দু হওয়ায় এমনিতেই তপশিলি জাতি বা অনগ্রসর জাতি হিসেবে সুযোগ সুবিধা পান। তারা তপশিলি উপজাতি-ভুক্ত হলে বাকি উপজাতিদের কাজের ক্ষেত্রে বা পড়াশোনায় বা চাকরি-বাকরিতে যেটুকু যা সুযোগ-সুবিধা ছিল, তাও থাকবে না। এমন যুক্তি দেখিয়ে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এর পরই শুরু হয় সহিংস পরিস্থিতি। যা দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বের অন্যতম বৈচিত্র্যময় পাহাড়ি রাজ্য মণিপুর। এখানে প্রায় ৩৪টি ছোট বড় নানা জনগোষ্ঠীর বাসভূমি। মেইতেইরা তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৩%। তাদের অধিকাংশই এই উপত্যকা অঞ্চলে থাকেন। বাকি রাজ্যের ৯০% পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাকি জনগোষ্ঠীর বসবাস। এসব জনগোষ্ঠীদের ‘নাগা’অথবা ‘কুকি’— এই দুই ‘চিহ্নিত উপজাতি’-তে বিভক্ত করা হয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর