chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পাহাড়ে পাজনে অতিথি বরণ হবে আজ

পাহাড়ে তিন দিনব্যাপি বৈসাবির উৎসবের দ্বিতীয় দিনে চলছে নানান আনুষ্ঠিকতা। বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে চৈত্র মাসের শেষ দিন। চাকমা সম্প্রদায়রা এটিকে মূল বিজু হিসেবে অভিহিত করেন। এই উৎসবের সবচেয়ে বড় আর্কষণ হলো’পাজন’। প্রতিটি ঘরে পাজনের রান্না হয়েছে। অতিথিরা ঘুরে ঘুরে আজ পাজন খাবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাজনের ছবি পোস্ট করে অনেকে উৎসবকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে।

পাজন কি

জুমের সবজিসহ ৩০ থেকে ৪০ পদের সবজি দিয়ে রান্না করা এই তরকারি। জুমের তরকারির মধ্যে – হিরিজি আগা, রাইন্যা বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, হোয়েংও মিষ্টি আলু, তিন পিলি আলু ইত্যাদি। এছাড়া কাঁঠাল, বেগুন, আলু, শুঁটকি, শুকনো মাছ, চিংড়ি, মুরগির মাংসহ হরেক পদ দেওয়া হয়।

এ তরকারির গুন হলো, যে যত পদের সবজি মেশাতে পারবে তার গুরুত্ব ও স্বাদ ততো বেশি। যে পদের তরকারি নেই তারা পড়শিদের কাছ থেকে ওই সবজি সংগ্রহ করে থাকে। এ দিন নতুন কাপড় পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরানো বেড়ানো, পাজন খাওয়া চাকমাদের আনন্দ উৎযাপনের মূল আয়োজন। চাকমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত আছে যে, বিজুর দিন কমপক্ষে সাত বাড়িতে বেড়াতে হবে। এসব বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পাজন খেলে পরবর্তী তিন মাস কোন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না কেউ। পাতে পাতে হরেক রকমের পাজনে চাকমাদের মধ্যে গড়ে ওঠে ভ্রাতৃত্ব।

পাজন নিয়ে রাঙামাটি সদরের স্থানীয় বাসিন্দা শুক্লানি চাকমা বলেন, বিজুর তৃতীয় দিন আমাদের প্রায় প্রতি ঘরে পাজন তোন থাকে। ঘুরে ঘুরে সাত ঘরে খাওয়ার রীতি রয়েছে। তার কম বা বেশি খেলেও অসুবিধে নেই। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ৩০ থেকে ৪০ পদ সবজি দিয়ে পাজন থৈরি হচ্ছে। অনেকে প্রতিবেচশীর কাছ থেকে এসব সবজি সংগ্রহ করতে পারে।

একই সঙ্গে এই দিনে কলা, নারকেল, বিনি চাল দিয়ে হোগা পিঠা, বরা পিঠা, কলা পিঠা বানানো হয়। নারকেল, গুড়, আতপ চালের সংমিশ্রণে বানানো হয় সাইন্ন্যা পিঠা। এগুলোর সাথে জিলাপি, মিষ্টি, কোকা কোলা, তরমুজ, পুডিং, সেমাই, সরবত, আইসক্রিম, কলা, আপেল, পেঁপে ইত্যাদি ফল থাকে। যার যেমন সামর্থ্য সে তেমন আয়োজন করে।

পাজন নিয়ে কবি ও সাহিত্যিক দেব প্রিয় চাকমা চট্টলার খবরকে বলেন, পাজন নিয়ে আমাদের বইয়ে আমি লেখা দেখিনি। তাই ইতিহাসটা আমি বলতে পারছি না। জুমের অনেক ধরনের সবজি উৎপাদন হয়। সেই সবজি থেকে এই পাজন রান্না করে আসছে পাহাড়ের মানুষ। কেউ ৩০ পদ, কেউ ৪০ পদ দিয়ে রান্না করে পাজন। যা এখন পাহাড় ছাড়িয়ে ভালো রেস্টুরেন্টেও বিক্রি হচ্ছে। দিন যত গড়াচ্ছে পাজনের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।

নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর