chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বছরের ব্যবধানে বোরো বীজ ধানের আবাদ কমেছে ১৮০ একর!

চট্টগ্রাম অঞ্চল

চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে বছরের ব্যবধানে বোরো বীজধানের আবাদ কমেছে প্রায় ১৮০ একর। গেল মৌসুমে রেকর্ড ৯৫০ একর জমিতে বোরোর বীজের আবাদ হলেও, চলতি বছরে আবাদ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৭০ একরে। আবাদ কমে যাওয়ায় বোরো বীজ ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও কমে গেছে প্রায় ১৮০ টন। বিএডিসি কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামে বোরো মৌসুমে বীজধান আবাদের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার কারণে চলতি মৌসুমে আবাদ কমানো হয়েছে। আবাদ কমে যাওয়ায় বীজ ধান সংগ্রহও কমে যাবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বোরো ধান বীজ দেরীতে আবাদের কারণে বীজ সংগ্রহে বিলম্ব হয়।। অঞ্চলভিত্তিক চাহিদাপত্র অনুযায়ী চট্টগ্রামের দুই জেলা থেকে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেশের অন্য প্রান্তে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সরকার চাইলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ সরকারের ধানবীজ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন’র (বিএডিসি)’র তথ্যমতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুই জেলায় বোরো বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭৭০ একর। প্রতি একরে সর্বোচ্চ ১ টন ধান বীজ সংগ্রহ করতে পারে বিএডিসি। এই অঞ্চলের দুই জেলায় ৭৭০ টন বোরো বীজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় আবাদ হয়েছে ৫৭০ একর। যা গতবছর ছিল ৭০৫ একর। অপরদিকে কক্সবাজার জেলায় আবাদ হয়েছে ২০০ একর।  যা গেল বছর ২৪৫ একর ছিলো। একর প্রতি ১০ কেজি বীজধান হিসেবে ৭৭০ একরের জন্য ১২৪ জন কৃষককে সাত হাজার ৭০০ কেজি বীজধান সরবরাহ করেছে বিএডিসি। কেজি প্রতি জাতভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে কৃষক এই বীজ সংগ্রহ করেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম জেলায় চলতি বছরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে ৫৭০ একর। যা গত বছর থেকে ১৩৫ একর জমি কম। এই জেলা থেকে প্রাথমিক ৫৭০ টন আটটি ভিন্ন জাতের বোরো বীজ থেকে সংগ্রহ করা হবে। যার মধ্যে ব্রিধান-২৮ জাত প্রজাতির ৯০ একর, ব্রিধান-২৯ জাত প্রাজাতির ২১০ একর, ব্রিধান-৭৪ জাত ৩০ একর, ব্রিধান-৮৮ জাত ৮০ একর, ব্রিধান-৮৯ জাত ১০০ একর, বিধান-৯২ জাতটি ৪০ একরে আবাদ হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো ব্রিধান ১০০ জাতটি (বঙ্গবন্ধু ধান) ২০ একর আবাদ হয়েছে। চট্টগ্রামের ৯৪ জন কৃষক এই বোরো জাতের ধান বীজ উৎপাদন করছেন। মূলত এই জেলায় বিআর ১৬ এবং ব্রিধান ৮১ জাতটির আবাদ বন্ধ রেখেছে বিএডিসি।

এদিকে কক্সবাজার জেলার ৩০ জন কৃষক ২০০ একর জমিতে ৭ জাতের বোরো জাতের বীজ উৎপাদনে বিএডিসির সঙ্গে চুক্তি করেছেন। চলতি বছরে ওই জেলায় আবাদ কমেছে ৪৫ একর। যার মধ্যে ব্রিধান-২৮ জাত প্রজাতির ২০ একর, ব্রিধান-২৯ জাত ৬০ একর, ব্রিধান-৭৪ জাত ৫০ একর, ব্রিধান-৮৮ জাত ২০ একর, ব্রিধান-৮৯ জাত ২০ একর এবং বিধান-৯২ জাতটি ৩০ একর আবাদ হয়েছে।

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কৃষক ইব্রাহিম জানান, তিনি প্রায় ১০ একর জমিতে বোরো বীজ ধান আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, বিএডিসি কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রতি মৌসুমে আমি ভালো মানের বীজ সরবরাহ করি। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় আগেরে চেয়ে উৎপাদন ভালো হবে।

বিএডিসি’র কর্মকর্তারা বলছেন, বীজ জাতীয় ধানের আবাদ সব সময় বেশী করতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। মূলত যে কোনো মৌসুমে ধান এবং ধানবীজ আবাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। বিএডিসি কর্মকর্তারা

কোন অঞ্চলে কতটুকু বীজ ধান আবাদ এবং কি পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করবেন তা নির্ধারণ করে থাকে। আমন মৌসুমে ৪৭-৪৮ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছে বিএডিসি। বোরোর বীজের ক্ষেত্রেও দাম ৫০ টাকার কাছাকাছি হতে পারে। যার কারণে বাজারের মনপ্রতি ধানের দামের অন্তত ৬০০ টাকার বেশী পেয়ে থাকেন এই বীজ উৎপাদনকারী চাষীরা।

জানতে চাইলে বিএডিসির (কগ্রো) উপ পরিচালক মো. আবু সাঈদ হাসান লতিফ বলেন, সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে বোরো বীজধান আবাদ করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে আবাদ কম হলেও সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই। দেশের বীজের চাহিদা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা এবং সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়। যার কারণে আমরা চাইলেও অতিরিক্ত আবাদ বা সংগ্রহ করতে পারিনা। এর মধ্যে গত মৌসুমে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় বীজ সংগ্রহে কিছুটা সমস্যা হয়েছিলো। তবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ধান উৎপাদনের জন্য বেশ ভালো লক্ষণ।  সরকারের তরফ ধেকে আরও অধিক লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করা হলে সে প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

 

মআ/চখ