chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বিস্ময়কর দামে চলছে “গলাকাটা” ব্যবসা

চট্টগ্রামে ঈদ বাজার :

নামি-দামি ব্র্যান্ডশপে নিজেদের ইচ্ছেমতো মূল্য আদায় করছিল বিক্রেতারা। পোশাক আমদানির স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারা, ক্রয় ও বিক্রয় রশিদ না রাখা, বিদেশি পণ্যে আমদা‌নি কার‌কের স্টিকার উঠিয়ে চড়া দামে বিক্রি চলছিল।  ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজারের “মনে রেখ” নামের একটি সুপার শপে অভিযান চালিয়ে এ চিত্র দেখতে পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত্য বিপনী বিতানগুলোতে এক দামের নামে বিস্ময়কর দামে চলছে গলাকাটা ব্যবসা।

এক দামের নামে বিস্ময়কর দামে চলছে গলাকাটা ব্যবসা

 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রানা দেবনাথ বলেন, ব্যবসায়ীরা পোশাকের গায়ে বিভিন্ন গোপন কোডে পণ্যের দাম লিখে রাখেন। এরপর ইচ্ছামতো দাম হাঁকিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের ঠকিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বিদেশী  পোশাকের ক্ষেত্রে কয়েক গুণ বেশি দাম রাখছেন।

পোশাক ক্রয়ের স্বপক্ষে কোনও কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ও  নিজেদের মতো মূল‌্য বসিয়ে পণ্য বিক্রিসহ নানা অপরাধে দুই প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

২ এপ্রিল প্রবর্তক মোড়ে মিমি সুপার মার্কেটে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ জানান, মিমি সুপার মার্কেটে বিদেশি পণ্য হলেও পণ্যের গায়ে আমদানিকারকের কোনো সিল নেই। নিজেদের মতো মূল‌্য বসিয়ে পণ্য বিক্রির অপরাধে সেফওয়ে কসমেটিকসকে ৩০ হাজার টাকা, কাপড় ক্রয়ের কোনও কাগজপত্র দেখাতে না পারায় মনি শাড়ীস ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর বড় বড় বিপনী বিতানগুলোতে এভাবে চলছে পোশাক বিক্রির নামে ডাকাতি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামে মার্কেটগুলোতে নজরকাড়া বাহারি পোশাকের সম্ভার থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। তারপরও আগে ভাগে পছন্দের কাপড়টি সংগ্রহ করতে মার্কেটে ছুটছেন ক্রেতারা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও ততই বাড়ছে। দিনে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে মার্কেট সরগরম থাকলেও রাতে থাকছে নগরবাসীর দখলে।

শুধু কাপড়-চোপড়ের দোকানেই নয়, সমানতালে ব্যস্ততা রয়েছে গিফট শপ, ঈদ কার্ড, ইমিটেশন জুয়েলারি ও ক্রোকারিজের দোকানেও। ঈদ উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন বুটিক ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে ক্রেতা-সমাগম ঘটছে নিত্যনতুন ডিজাইনের রকমারি কারুকাজের কাপড় সংগ্রহের জন্য।

কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, অভিজাত মার্কেটগুলোতে উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভিড়ই বেশি। তবে নগরীর মাঝারিমানের মার্কেটগুলোতে সব ধরনের ক্রেতার আনাগোনা রয়েছে। ফলে অভিজাত মার্কেটগুলোতে কাপড়-চোপড়সহ বিলাসী ঈদ সম্ভার থাকলেও মাঝারি ধরনের মার্কেটগুলোতে পণ্য তোলা হয়েছে সব ধরনের ক্রেতার সাধ্যের কথা বিবেচনা করে।

অভিজাত মার্কেটগুলোতে দাম নয়, ক্রেতাদের কাছে পছন্দটাই বড় কথা। তবে এর ব্যতিক্রম রয়েছে সাধারণ মার্কেটগুলোতে।

স্যানমার ওসান সিটির ব্যবসায়ীরা জানান, স্যানমার ওসান সিটি অভিজাত মার্কেট হলেও আমরা সব শ্রেণীর ক্রেতার কথা মাথায় রেখে পোশাকের সম্ভার ঘটিয়েছে। অভিজাত মার্কেটে পোশাকের দাম বেশি রাখা হয় বলে যে অভিযোগ করা হয় তা সঠিক নয়।’ কাপড়-চোপড়ের পাশাপাশি ইমিটেশন জুয়েলারির জন্যও আমীন সেন্টরের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আলাউদ্দিন।

মহিলাদের কাছে শাড়ি ও থ্রিপিসের কদর এবারও অটুট রয়েছে। শাড়ির মধ্যে এবার নেট, শিপন, জর্জেট ও হাফ সিল্কের চাহিদাই বেশি। এছাড়া সাউথ কাতান, কাঞ্চি পুরিয়া, ধুপিয়া, বেনারস, রাজশাহী সিল্ক, ইতালিয়ানসহ এ ধরনের কাপড় কিনছেন নারীরা। তবে অন্য বছরের তুলনায় এসব কাপড়ের দাম কিছুটা চড়া। কাপড়ের মানভেদে এসব শাড়ির দাম রাখা হচ্ছে তিন থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে এবার ভারতীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ভারতীয় পণ্যগুলো চোরাই পথে এসব মার্কেটে প্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওইসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে ইচ্ছে মতো দামে।

একইভাবে তরুণীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় থ্রিপিসগুলোতেও রয়েছে নানা কারুকাজ। জরি, কারচুপি, চুমকি, এপলিক ও মেটালের কাজ করা মনলোভা কাপড়ের সমাহার রয়েছে নগরীর মার্কেটগুলোতে। তবে গরম থাকায় সুতি কাপড়ের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি ।

ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট ও ফতুয়া, জিন্স প্যান্টের চাহিদা বেশি এবার।  পাঞ্জাবির মধ্যে শর্ট পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। নগরীর হ্যান্ডিবাজার, খাকি, কেটস আই, আড়ং, নবরূপা, দেশী দশ, রমণীয়ার শোরুমগুলোতে বৈচিত্র্যময় ফ্যাশনের কালেকশন রয়েছে। এছাড়া ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সে উডল্যান্ডে রয়েছে বড়দের রকমারি শার্ট, প্যান্ট, ফতুয়াসহ শিশুদের নজরকাড়া পোশাকের সম্ভার।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, রমজানে মুনাফালোভী কিছু ব্যক্তি ইচ্ছে করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। রমজানে বেশি দামে কাপড় বিক্রি রোধে অভিযান চলমান থাকবে।

মআ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর