chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বিদেশি পণ্যে ঠাসা রিয়াজউদ্দিন বাজার

নগরীর পাইকারি ও খুচরার সবচেয়ে বড় মার্কেট হচ্ছে রিয়াজ উদ্দিন বাজার। ঘিঞ্জি পরিবেশে গড়ে উঠলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের কাছে এখন পর্যন্ত সমান জনপ্রিয় এই মার্কেট। এখানে কাপড় থেকে শুরু করে সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক পণ্য, জুতা, ব্যাগ থেকে চকলেট, বিদেশি দুধ সবই মেলে। ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি দোকান আছে এখানে। রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও তামাককুণ্ডি লেইন এক সময় দেশীয় পণ্যের নানা সমাহার থাকলেও এখন দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি শোভা পাচ্ছে ভারতীয় জামা-কাপড় ও প্রসাধন পণ্য। ভারতীয় পোশাকের দখলেই মূলত রিয়াজ উদ্দিন বাজারের ঈদ বাজার। ফলে দেশীয় পণ্য মার খাওয়ার পাশাপাশি অবৈধ পথে বিপুল পরিমান দেশীয় টাকা চলে যাচ্ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের হতে। তবে এবার ঈদে রিয়াজ উদ্দিন বাজারে আগের মতো জুলুস নেই বললেই চলে। কমেছে ক্রেতা।

খুচরা পোশাক বিক্রেতারা জানান, দেশীয় পোশাকের চাইতে ভারতীয় পোশাক বেশি ঝলমলে। সেগুলোর চাহিদাও ক্রেতাদের মাঝে বেশি দেখা যাচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে রোজায় আগে থেকেই ভারতীয় পোশাক আমদানি করা হয়েছে। বিক্রিও অনেক ভালো হচ্ছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় কাতান, মিনাকুমারী, মৌ মাস্তান, বেনারসি, কাঞ্চিবরণ, কাশ্মীরি সিল্ক ইত্যাদি শাড়ি এবং বাহারি রং ও ভারতীয় সিরিয়াল, নজরকাড়া ডিজাইনের, পাশাপাশি চলচ্চিত্র ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কারণে দেশীয় পোশাকের চেয়ে এসব পোশাকের চাহিদা বেশি। শপিংমলগুলোতে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো। যার কারনে দেশীয় পোশাকের বিক্রি কম।

ভারতীয় ডিআইডি কটন, পেপার সিল্ক, গাউন, ব্রাইডাল গাউন, ইন্ডিয়ান বেনারসি কাতান, ভারতীয় জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে রিয়াজ উদ্দিন বাজারে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে ভালোমানের দেশি পোশাকের চেয়ে ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশি। আর প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে নিম্নমানের ভারতীয় পোশাক দিয়ে দোকান সাজিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে ভারতীয় পণ্য বিক্রি হলেও এসব পণ্য আটক হচ্ছে খুব কম। তবে গত ২৪ মার্চ ফেনী জেলার সোনাগাজী থানাধীন মির্জাপুর এলাকা থেকে বিপুল পরিমান অবৈধভাবে আসা ভারতীয় কাপড় উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৮৯৫ পিস ভারতীয় শাড়ি এবং ১৬০ পিস ভারতীয় থ্রি-পিস উদ্ধার করা হয়।

আটককৃত আবু বক্কর সিদ্দিক র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসা শাড়িগুলো চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে জাত ব্যবসায়ীদের কারণেই রিয়াজউদ্দিন বাজার শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সুখ্যাতি পেয়েছে। সব ধরনের পোশাক থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দরকারি সবই পাওয়া যায় এখানে।’

আকবর ক্লখ ষ্টোরের মালিক আকবর আলী জানান, প্রতিবছর রোজার শুরু থেকেই সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের পদচারণা আর বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকে রিয়াজউদ্দিন বাজার। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে বিকিকিনি আগের তুলনায় অনেক কম।

সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে যাতে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য বাজারের বেশির ভাগ এলাকা ত্রিপল-প্যান্ডেল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বাজারের কাদেরিয়া বেনারসী ভাণ্ডার, মুন্নি শাড়িজ, এম আবু আহমদ অ্যান্ড সন্স, সুগন্ধা শাড়ি বিপণি, মেসার্স রূপসজ্জা, সিল্ক প্যারাডাইস, পরীস্থান, ঝুমুর শাড়ি বিতান, শতদল স্টোর, কাসেম গার্মেন্টস, অদুদ ফেন্সী স্টোর, তনু শাড়ি বিতান, নোবেল ক্লথ স্টোর, প্রগতি শাড়ি বিতানসহ বাজারের সব মার্কেট ও কাপড়ের দোকান ক্রেতার ভিড়ে মুখর সরাক্ষণ।

সহজে সবকিছু পাওয়া যায় বলেই শতবছর ধরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই বাজার। তবে দেশি জামা-কাপড়ের চেয়ে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা ইদানীং বেড়ে গেছে। সেখানকার নাটক-সিনেমার প্রভাবে ভারতের সবকিছুর কদর এখানে বেশি বলে মনে করেন অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা।

চখ/জুইম

এই বিভাগের আরও খবর