chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

গণমাধ্যমকর্মী আইন সংশোধনে কমিটি গঠনের সুপরিশ

গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতে গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রয়োজন। তবে প্রস্তাবিত আইনের সংশোধন ছাড়া এই আইন পাস হয়ে গেলে তা সংবাদমাধ্যমের এগিয়ে যাওয়ার পথকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বুধবার (২২ মার্চ) ডেইলি স্টার ভবন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন: অংশীজন সংলাপ’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংলাপে গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন সংশোধন প্রস্তাবনা তৈরিতে সব অংশীজন ও প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে এই কমিটি আইনের খসড়া সংশোধনে প্রস্তবনা চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পাঠাবে।

সংলাপে অংশ নেন বিএফইউজে, জাতীয় প্রেস ক্লাব, অ্যাটকো, এডিটরস গিল্ড, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাব এডিটরস কাউন্সিল, টিসিএ এবং প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা।

সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা নানা দিক থেকে ঝুঁকিতে আছেন। সুরক্ষার জায়গাটি দিন দিন দুর্বলতর হচ্ছে। সরকারের প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনটি সংসদে তোলার পর তা পর্যালোচনার জন্য এখন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে।

এই আইনটি গণমাধ্যমকর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করবে কি-না এবং বিভিন্ন দেশে কী ধরনের আইন রয়েছে তা নিয়ে আলোচনার জন্য অংশীজন সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।

সংলাপ অনুষ্ঠানে একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এডিটর্স গিল্টের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু আইনের খসড়াটি সংশোধনে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।

এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমরা একটি সমন্বয় কমিটি করি। মিনিমাম কমন গ্রাউন্ড তৈরি করি। কমন গ্রাউন্ড তৈরি করে তাদের (অংশীজনদের) কাছে যাবো। মালিকরা বেতন দিতে চান না ব্যাপার তো না। উনারা কোনও নিয়মকানুনের মধ্যে পড়তে চান না, বাধ্যবাধকতায় পড়তে চান না।

তিনি বলেন, মালিকপক্ষকে রাজি করতে পারি, বা না পারি সরকারকে রাজি করতে পাবরো। সো-কল্ড ফ্রি মিডিয়া ও স্যোসাল মিডিয়ার হাত থেকে যদি রাষ্ট্রকে সরকার বাঁচাতে চায়, তাহলে গণমাধ্যমকে অনেক কাছে নিতে হবে। গণমাধ্যম জাতীয় বিবেক তৈরি করবে। বিবেকহীন সমাজ তৈরি হবে। সুতরাং সরকারকে এটা বোঝাতে হবে।

জেষ্ঠ সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু বলেন, গণমাধ্যম তো পাটকল কিংবা গার্মেন্টস কারখানা নয়। সে কারণেই আলাদা আইন লাগবে। সংবাদমাধ্যম বলতে পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন সব এক। আমরা যদি কিউরেটেড মিডিয়া বলি- সম্পদকীয় নীতির অধীনে পরিচালিত কিউরেটেড মিডিয়াকে যদি সংবাদমাধ্যম বলি তাহলে সমস্যা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, আইন বড় করবেন তত বিপদে পড়বেন। তাতে করে সো-কল্ড মালিকপক্ষ আইনটা বাতিল করে ফেলবে। ছোট করে জ্ঞানভিত্তিক কিউরেটেড সংবাদ মাধ্যম সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জন্য আইন করে বাকিটা বিধির মধ্যে ছেড়ে দেন।

যেগুলো আমরা অর্জন করেছি, সেগুলো তো ছাড়বো না। ট্রেড ইউনিয়ন আমরা অর্জন করেছি। মানবাধিকারের যেসব সনদ, নারী অধিকারের যেসব সনদ অর্জন করেছি সেগুলো এই আইনে এমবেডেড থাকবে।

এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, সাংবাদিকদের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আওতামুক্ত রাখতে হবে। আমরা একটি কমিটি গঠন করি, দুই মাসের মধ্যে কাঠামো (সংশোধন খসড়া) দাঁড় করিয়ে দেবে। আমরা মূলত চাই কী? বেতনের প্রোটেকশন ও কালো আইন থেকে প্রোটেকশন।

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ডেটা সিকিউরিটি আইন থেকে প্রোটেকশন চাই। চুয়াত্তরের বিশেষ ক্ষমতা আইন আমরা চ্যলেঞ্জ করেছি। পত্রিকা বন্ধ করা যাবে না এটা অর্জন করেছি। পত্রিকা যেমন বন্ধ করা যায় না, তেমনি কোনও গণমাধ্যমই যাতে বন্ধ করা না যায়।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ বলেন, সংবাদমাধ্যমের মালিকপক্ষ আইনটি না করার ব্যাপারে সেতুমন্ত্রীকে বলেছেন। কিন্তু আমরা আইনটি চাই। তবে এই আইনের বেশ কিছু ধারায় সংশোধন প্রয়োজন। অন্যথায় সংবাদমাধ্যমকে দুর্বল করবে এই আইন।

সংলাপ অনুষ্ঠানে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, এই আইনটা করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে।

সুতরাং মালিকপক্ষের চিন্তা বাদ রেখে আমরা যদি এক হতে পারি, তাহলে আমরা এটা করতে পারি। এই আইনের খসড়ায় যেখানে যেখানে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সংশোধন প্রস্তাবে ধারা কমিয়ে বিধিমালা করার প্রস্তাব করতে পারি। সব অংশীজনের সঙ্গে আমরা সংলাপ করবো।

গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ৯৬-৯৭ সালে ওয়েজ বোর্ডের সময় পত্রিকার মালিকরা তো প্রতিনিধি দেননি। তখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

উনি বলেছিলেন, মালিকদের ছাড়াই ওয়েজবোর্ড হবে, হয়েছিল। সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব ওয়েজবোর্ডের বিরোধিতা করেছে, এই আইনটারও বিরোধিতা করেছে। রাষ্ট্র ও সরকার যদি নিজেদের বিকাশ চায় তাহলে ভালো সাংবাদিকতার জায়গা দিতে হবে। যদি না দেয় তাহলে রাষ্ট্র ও সরকার নিজেরাই নিজেদের বিনষ্ট করবে বলে আমি মনে করি।

আইনের খসড়ায় মৌলিক কিছু সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, গ্র্যাচুয়িটি একটি করে ফেলা হয়েছে। আর মালিক আর সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত মামলার মধ্যে থাকবে সেটা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে বলেছি। সব অংশীজনের মতামত লাগবে।

সরকার নির্বাচন নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে যাবে, যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে পারবে। প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনটি ‘সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মচারী আইন’ হতে পারে বলে অভিমত দেন সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর