chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ঋণ নির্ভরতা কমাতে হবে

চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রাক-বাজেট নিয়ে মতবিনিময়

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রাক্কালে চট্টগ্রাম চেম্বার নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের সাথে এক প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

আজ বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভার সভাপতিত্ব করেন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম।

এতে বক্তব্য রাখেন রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, ড. সামস উদ্দিন আহমেদ ও জাকিয়া সুলতানা। মত প্রকাশ করেন চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, পরিচালক এ. কে. এম. আক্তার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান (টুটুল)।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন-আমাদের সামনে রয়েছে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’র চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতার জায়গা তৈরি করতে হবে। এজন্য যুগোপযোগী শিল্পায়ন যেমন করতে হবে তেমনি করের আওতাও বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন-সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর কর, শুল্ক এবং ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর কাজ করছে।

পাশাপাশি এনবিআরের উইংসগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য চট্টগ্রামে দৃষ্টিনন্দন কাস্টমস হাউস ভবন, কর ভবন, ট্যাক্স একাডেমী আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে ভ্যাট ভবনের জন্যও প্রকল্প নেয়া হবে।

স্বাগত বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় বাজেট সাজানো বিশেষ করে আমরা বর্তমানে যে সকল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি তা হ্রাস করা এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়া ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে দেশের স্বনির্ভর রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়ার আহবান জানান তিনি।

চেম্বার সভাপতি আরো বলেন-সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়াতে হবে তেমনি যারা রাজস্ব যোগান দেয় তাদের সুযোগ সুবিধা মাথায় রেখে ভ্যাট, শুল্ক ও ট্যাক্স বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে করসীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, পরবর্তী ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৫%, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০%, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১৫%, ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০% এবং তদুর্ধ্ব ২৫% হারে নির্ধারণ, ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স এডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রবর্তন, অগ্রিম কর বা অগ্রিম ভ্যাট সমন্বয় করে দ্রুত রিফান্ড করা, এইচ.এস. কোড সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম শুল্ক জরিমানা এবং সময়ক্ষেপনের জটিলতা দূর করার প্রস্তাব করেন।

চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন-দেশের রাজস্ব বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদী পলিসি নেয়া উচিত। এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিক বলেন-ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সহজ হয় এবং বাধাগ্রস্ত না হয় সেইজন্য এইচএস কোড জটিলতা নিরসন করা হবে। এছাড়া কাস্টমস বিষয়ক যেসব প্রস্তাবনা এসেছে তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে এনবিআর।

আমরা বদলে যাব, বদলে দিব এই শ্লোগানে দেশের রাজস্ব আয় বাড়াতে করের ক্ষেত্র বাড়ানোর গুরুত্বারোপ করে এনবিআর সদস্য ড. সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন-আয়কর দেয়ার সংস্কৃতি বাড়াতে হবে। এজন্য দেশের করনেট সম্প্রসারণের জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি করমুক্ত আয়সীমা ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করার প্রক্রিয়া বিবেচনাধীন আছে বলে জানান।

এনবিআর সদস্য জাকিয়া সুলতানা বলেন-স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে ঋণের নির্ভরতা কমাতে হবে। এই জন্য ট্যাক্সের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, বিকল্প সার্ভারের ব্যবস্থা করা, নারী উদ্যোক্তাদের আয়কর সীমা ও এসএমই খাতে জামানতহীন ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা করা, সকল কাস্টমস স্টেশনে একই পণ্যের সমমূল্যে শুল্কায়ন নিশ্চিত করা, রাজস্ব আইন পরিবর্তনের কমিশন গঠন, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখা, আগাম করের ক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড, ভ্যাট সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সীমা নির্ধারণ, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতিরেকে শুধু মূসক ৬.৩ এর মাধ্যমে আসবাবপত্র বিপণনের সুযোগ প্রদান, লবণ শিল্পের উন্নয়নে হাইটেক প্রযুক্তি আনায়নে শুল্ক মুক্ত রাখা, বিষমুক্ত অর্গানিক শুটকি উৎপাদনে কর অবকাশ সুবিধা, ভ্যাটের হার কমিয়ে সর্বস্তরে চালু করা, চট্টগ্রাম কাস্টমস এর জনবল বৃদ্ধি ইত্যাদি দাবী উত্থাপন করেন।

বিজিএমইএ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার, উইম্যান চেম্বার, কক্সবাজার চেম্বার, রাঙ্গামাটি চেম্বার, রিহ্যাব, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন,শিপ বিল্ডিং, শিপ রিসাইক্লিং, চিটাগাং ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশন, লুব-রেফ, বিএসআরএম, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন,মটর পার্টস এন্ড টায়ার টিউব মার্চেন্ট এসোসিয়েশন, রাবার-গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন,বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম নগর ও জেলা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী গ্রুপের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবর্গ উপস্থিত থেকে তাদের মতামত প্রকাশ করেন।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর