চট্টগ্রামে মেয়েকে দিয়ে এক জুয়াড়ি মায়ের যত ছল-চাতুরি
নিজের গর্ভজাত মেয়ে রাসেদা আকতারকে পলিথিনে আগুন দিয়ে পা পুঁড়ে দেয়। এরপর রাস্তায় বসিয়ে দেওয়া হতো ভিক্ষার থলি দিয়ে। পোঁড়া পা দেখিয়ে মানুষের সহানুভূতি নিয়ে ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করতে বাধ্য করতো মেয়েকে। ভিক্ষা করাতে গিয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের জন্য সে তার সন্তানের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের সৃষ্টি করে। সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করানোর মাধ্যমে পাওয়া টাকা দিয়ে তিনি জুয়া খেলতো।
এমনও একজন মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। বয়স ৩৮। তিনি রাঙ্গামাটি আর্মি ক্যান্টনমেন্ট এর জলযানঘাট এলাকার আব্দুল খালেক ভূঁইয়ার মেয়ে।
তিনি মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষাবিত্তি ও মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো।
গত ১২ মার্চ রাত ১০ টায় পাঁচলাই থানাধীন বদনাশাহ মাজার এলাকা থেকে অভিযুক্ত হোসনে আরা বেগমকে পিবিআই গ্রেফতার করেন।
পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মর্জিনা আকতার বলেন, ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল হোসনে আরা বেগম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- ৭ চট্টগ্রামে জনৈক মোঃ রাশেদ, লিমুসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে তার মেয়ে রাশেদা আকতারকে (১১) জোরপূর্বক অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন । এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নং-১১৮/২০২২, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ( /০৩) ৭/৩০ দায়ের হয়। আদালত মামলাটি অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর উপর দায়িত্বভার অর্পন করেন।
পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মর্জিনা আকতার বলেন, পিবিআই মেট্রোর উপ-পুলিশ পরিদর্শক জাহেদুজ্জামান চৌধুরী বর্ণিত নারী ও মাটি অনুসন্ধানকালে ভিকটিম রাশেদা আকতারকে উদ্ধার করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ২২ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করেন।
আদালত সূত্র জানায়, কথিত ভিকটিম রাশেদা আকতার বিজ্ঞ আদালতে তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, সে কানাশাহ মাজারের সামনে ভিক্ষা করত। তার মা হোসনে আরা বেগম পলিথিন দিয়ে তার পা পুঁড়ে দিত। পোঁড়া পা দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করত। ভিক্ষায় সংগৃহীত টাকা দিয়ে হোসনে আরা বেগম হুোন্ডা খেলা (জুয়া) । ভিকটিম রাশেদা আকতারের ছোট ভাই এক্সিডেন্ট করে পা ভেঙ্গে ফেলায় তার চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। তখন রাশেদ ও লিমু নামে দুইজন তার মাকে আর্থিক সহায়তা করে। পরে রাশেদ ও লিমুর বাসায় ভিকটিম রাশেদা আকতারকে গৃহকর্মী হিসাবে কাজে দেওয়া হয়। লিমু এ রাশেদ ভিকটিম রাশেদা আকতারকে অপহরণ করেছে বলে মিথ্যা মামলা দিয়ে টাকা আদায়ের ফন্দি আঁটেন।মিথ্যা মামলার বিষয়ে তদন্ত করে পিবিআই আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে ভিকটিম রাশেদা আকতারকে দিয়ে ভিক্ষা বৃত্তি পেশায় জড়ানোর জন্য তার মা হোসনে আরা বেগমের বিরুদ্ধে শিশু আইন ২০১৩ এর ৭১ ধারা মোতাবেক এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বাদী করে এফআইআর গণ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ওসি পাঁচলাইশ মডেল থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামী হোসনে আরা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়।
চখ/জুইম