chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

এক দিনেই জন্ম নিবন্ধন করে দেন তারা!

স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরিতে লাগছে ৫০০ টাকা। আর ৮০০ টাকা দিলে একদিনেই ধরা দিবে কাঙিক্ষত এই সনদ। এই সুবিধা নিতে ফেসবুকেও খোলা হয়েছে বার্থ সার্টিফিকেট অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন, হেল্প অব বার্থ সার্টিফিকেট অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশনসহ নামে বিভিন্ন পেজ। এসব পেজে যোগাযোগ করে অনেকের মিলছে জন্ম নিবন্ধন। ইস্যু করা এসব জন্ম নিবন্ধনে নেই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাক্ষর। এমনকি জন্ম নিবন্ধনে ব্যবহার করা ঠিকানা ভুয়া। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা এসব ঠিকানায় ওই নাগরিকের অস্তিত্ব নেই। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কার্যালয় থেকে এমন সনদ ইস্যু হয়ে আসলেও, জানা নেই কর্তৃপক্ষের। ভোগান্তি ছাড়াই জন্ম নিবন্ধন সনদ পেতে অনেকেই ঝুঁকছেন এমন প্রবণতায়।

নগরের তিনটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসের সার্ভার আইডি হ্যাক করে সনদ জালিয়াতি করে আসা একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্যের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার ডা. মোহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে দামপাড়া পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে গতকাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযানের মুখে জালিয়াতি চক্রের চার সদস্যকে গেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন, মো. জহির আলম (১৬), মোস্তাকিম (২২), দেলোয়ার হোসাইন সাইমন (২৩) ও মো. আব্দুর রহমান প্রমানিক আরিফ (৩৫)। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪ টি সিপিইউ, তিনটি মনিটর, একটি স্ক্যানার ও প্রিন্টার, একটি প্রিন্টার এবং চারটি মুঠোফোন জব্দ করেছে। এই চক্রটি একটি, দুটি নয় ৫ হাজার এর বেশি জন্ম নিবন্ধন সনদ সৃজন করেছে বলে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, কাউন্সিলর অফিসের সার্ভার ব্যবহার করে গত ৮ জানুয়ারি ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড (বন্দর), এরপরের দিন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড (পাহাড়তলী) ও ২১ জানুয়ারি ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে (পতেঙ্গা) যথাক্রমে ৪০, ১০ এবং ৮৪ টি ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের খবর পাই। বিষয়টি জানাজানির পর কাউন্সিলর অফিসের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা করেছে। এরপর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ছায়া অনুসন্ধানে কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের সদস্যরা। অনুসন্ধানে আমরা একাধিক জালিয়াতি চক্রের খবর পাই। এর মধ্যে গতকাল একটি চক্রের চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিএমপির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি ফেসবুক ব্যবহার সময় বার্থ সার্টিফিকেটের বিভিন্ন পেজ দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে জন্ম নিবন্ধনের জন্য যোগাযোগ করে থাকে। এরপর জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা ওই ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সরকারের নির্ধারিত সাইটে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধনের কাজ শেষ করে। পরে একজন হ্যাকার অবৈধভাবে সার্ভারে ঢুকে জাল সনদ তৈরি করে। এই চক্রটির কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূণ তথ্য পেয়েছি। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তারা ৫ হাজারের বেশি জন্ম নিবন্ধন সৃজন ও বিতরণ করেছে। সারাদেশে একাধিক জালিয়াতি চক্র অবৈধভাবে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বলে জানতে পেরেছি। একেকটি চক্রে ৩০ থেকে ১০০ জন সদস্য রয়েছে।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের নাগরিক, রোহিঙ্গা শরণার্থী কিংবা সরকারি অফিসের ভেতরের কেউ জড়িত আছে কিনা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এসব চক্রের অনেকেই আমাদের আওতায় বাইরে রয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। এরপর আরও বিস্তারিত জানাতে পারবো।

 

আরকে/ চখ

এই বিভাগের আরও খবর