শর্ত দিয়ে ক্লাসে ফিরছেন চবির চারুকলা ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীরা
মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় অবস্থানের মুখে সাত দিনের জন্য আন্দোলন শিথিল ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীরা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দাবি আদায়ের কার্যত প্রদক্ষেপের আশ্বাস পেয়ে পাঠদানে অংশ নিবেন তারা। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নয়, ইনস্টিটউিটের বাইরে বসবে ক্লাস।
রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ও সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাছিরের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসে। এসময় বৈঠকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরসহ চার দফা দাবি নিয়ে কথা বলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
জানেত চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জরিহুল ইসলাম অভি বলেন, গতকাল শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরও আমরা দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছি। সাবেক চসিক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আমাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তবে আমরা দাবি আদায়ের সুপষ্ট কোনো আশ্বাস পাইনি। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সাবেক চসিক মেয়রসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। আমরা ইনস্টিটিউটের ফটক খুলে দিয়ে বৈঠক করেছি। বৈঠকে আমরা অর্থনৈতিক মন্দা শেষে মূল ক্যাম্পাসে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে স্থানান্তর, চারুকলা ইনস্টিটিউটে এতদিন ব্যবহার হয়ে আসা শিক্ষক-শহর ক্লাবটি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী করা, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একটি বাসা বাড়ানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কারসহ মেরামতের বিষয়ে চারটি দাবি তুলে ধরেছি।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন,আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব দাবি আদায়ের বিষয়টি ফলোআপ হিসেবে রাখবো। মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোসহ উল্লেখিত দাবি আদায়ের বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবো। যদি দাবি আদায়ের বিষয়ে কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, আমরা আবারও ক্লাস বর্জনের আন্দোলনে যাব।
এক প্রশ্নে এই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দাবি শোনার পর জেলা প্রশাসন ও আ জ ম নাছির উদ্দীন দ্রত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তারা বলেছেন, অবকাঠামাগত উন্নয়ন এবং মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোর বিষয়ে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। আমরা এক সপ্তাহ সময়ের কথা বলেছি। এই সময়ের মধ্যে কাজ না হলে, আমাদের দাবির বিষয়ে উনারা সহায়তা করবে।
এর আগে আন্দোলনের ৮১ তম দিনে অচলাবস্থা কাটাতে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
সেখানে আধা ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় শিক্ষার্থীরা দাবির বিষয়ে কথা বলেন। এরপর শিক্ষাউপমন্ত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা নগরের বাদশাহ মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন তিনি। দু দফা আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার অনুরোধ করেন। তবে মূল ক্যাম্পাসে ফেরার আশ্বাস না পেয়ে শিক্ষার্থীরা আবারও ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে ইনস্টিটিউটের অবস্থান।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। ছাত্রীদের জন্য মাত্র একটি শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। ১৩ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধার আওতায় এসেছেন। লাইব্রেরীতে বই নেই। নেই ডাইনিংয়ে খাবারের ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাঁরা নগর ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চান।
এসব দাবিতে গেল ২ নভেম্বর সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, প্রতীকি ক্লাসসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার বৈঠকের পর দাবি আদায়ে সাড়া না পেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান তারা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ইনস্টিটিউটের পাঠদান কার্যক্রম।
আরকে/ চখ