chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দু দফা বৈঠকেও দাবি  আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের(চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোর ৮১তম দিনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনী

দু দফা বৈঠকেও অচলাবস্থা কাটাতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে যোগদানের অনুরোধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। একই সঙ্গে বৈঠকে অন্যান্য দাবির ক্রমন্বয়ে আদায়ের আশ্বাস দেন।

বৈঠকে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সরকারের বাজেট স্বল্পতা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে মূল দাবি আদায়ের কোনো আশ্বাস না পেয়ে আন্দোলনে অনড় থাকার কথা ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট।  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে ইনস্টিটিউটের অবস্থান।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। ছাত্রীদের জন্য মাত্র একটি শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। ১৩ জন শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধার আওতায় এসেছেন। লাইব্রেরীতে বই নেই। নেই ডাইনিংয়ে খাবারের ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাঁরা নগর ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চান।

এসব দাবিতে গেল ২ নভেম্বর সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, প্রতীকি ক্লাসসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার বৈঠকের পর দাবি আদায়ে সাড়া না পেয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন তারা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ইনস্টিটিউটের পাঠদান কার্যক্রম।

এদিকে শনিবার (২১ জানুয়ারি) একদিনের সরকারি সফরে চট্টগ্রামে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনী। অনেককটা নির্ধারিত সূচির বাইরে গিয়ে দুপুরে তিনি সার্কিট হাউজে চারুকলার ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

এসময় বৈঠকে শিক্ষাউপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ডা. শিরীণ আখতার, উপ-উপচার্য অধ্যাপক বেনী কুমার দে, প্রক্টর রবিউল ইসলাম ভূইয়া, সাবেক চসিক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকে তারা শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি ২২ দফা দাবি ১ দফায় নেমে আসার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাখ্যা চান। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষামন্ত্রী নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে  যান। সেখানে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।

বৈঠক শেষে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই মুহূর্তে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়া বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে উপমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করুক। এটি কখনই কাম্য নয়। একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চারুকলা ইনস্টিটউিট স্থানান্তরের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পর্ষদ সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে আমরা অনুরোধ করবো তারা যেনো আগামীকাল থেকে পাঠদান শুরু করে।

শিক্ষাউপমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সাবেক চসিক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ডা. শিরীণ আখতার, উপ-উপচার্য অধ্যাপক বেনী কুমার দে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপরাগত প্রকাশ করেন।

তারা চলে যাওয়ার পর চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আবারও দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান কর্মসূচি থেকে তারা দাবি আদায়ের পক্ষে স্লোগান দেন। যথারীতি আগামীকাল সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির কথা জানান।

জরিহুল রায়হান অভি নামে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় আধা ঘণ্টা ব্যাপী শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দাবির বিষয়ে কথা হয়েছে। উনারা চারুকলা ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলছেন। কিন্তু  আন্দোলনের ৮১ তম দিনে এসে কেনো অবকাঠামো বিষয়ে কথা হচ্ছে। আমাদের মূল দাবি চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতে হবে। এই ছোট ক্যাম্পাসের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আমরা আন্দোলন করিনি।

তিনি আরও বলেন, কেনো চারুকলা ইননিস্টটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে নেওয়া হবে না এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জানতে চাই। আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে চাই, তবে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে।

বাজেট স্বল্পতার বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা হলে এই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বলছি না কালকেই আমাদের জন্য ভবন নির্মাণ করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলবে, সে সঙ্গে আমাদের অস্থায়ীভাবে ক্যাম্পাসে ক্লাস করার সুযোগ করে দেওয়া হোক।

 

আরকে/ চখ

 

এই বিভাগের আরও খবর