chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ইতিহাস-ঐতিহ্যে চট্টগ্রামের প্রাচীন মসজিদ পর্ব-২

২২৬ বছরে পা রাখলো আসগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ :

মোগল আমলের তৈরি উত্তর হালিশহরের চৌধুরীপাড়ায় আসগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে মোগল আমলের স্থাপত্য নকশায় চুন-সুড়কির তৈরি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ গড়ে তুলেছেন মরহুম আসগর আলী চৌধুরী। বাণিজ্যিক দিক থেকে মূল্যবান এ এলাকায় প্রতি গণ্ডা জায়গার দাম প্রায় কোটি টাকা। কিন্তু ১০ শতক জায়গায় তৈরি করা মসজিদটির সামনে আছে প্রায় ১০০ শতক জায়গার ওপর পুকুর। মসজিদের দক্ষিণে ২০ শতক জায়গায় আছে কবরস্থান।

আড়াইশ’ বছরের পুরনো এ মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে তাজমহলের আদলে। এতে বড় গম্বুজ আছে তিনটি। কিন্তু মিনার আছে ২৪টি। পোড়ামাটির রঙের এ মসজিদের চারপাশে আছে নানা রকম নকশা। ভেতরেও নানা নকশা আছে মসজিদের দেয়াল ও কাঠামোজুড়ে। প্রচলিত কোনো জানালা নেই এতে।

 

মোগল স্থাপত্য ‘কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ’

চট্টগ্রাম নগরের জামাল খানে অবস্থিত ঐতিহাসিক কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ। মোঘল শাসক নবাব ইয়াছিন খাঁন ১৭১৯ সালের দিকে এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৭৯৯ থেকে ১৮০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ চার বছরে মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। মসজিদটি নির্মাণকালে মোঘল স্থাপত্য শৈল্পিক চেতনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। কদম মোবারক মসজিদের গঠন, অবকাঠামো, নির্মাণ শৈলী, কারুকার্য্য এখনো সবাইকে আকৃষ্ট করে।


মোঘল শাসকরা যখন চট্টগ্রামকে মগ এবং পর্তুগীজদের হাত থেকে মুক্ত করেন তখন এখানে মোঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত পর এখানে ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং তাদের বিজয়ের নির্দশন স্বরূপ বহুমসজিদ নির্মাণ করেন। কদম মোবারক মসজিদে মোঘল শাসকদের রুচির বহিঃ প্রকাশ ঘটেছে। সমতল ভূমি থেকে অনুচ্ছ পাহাড়ের মাঝখানে উত্তর-দক্ষিণে লম্বাকৃতির এই মসজিদে পাঁচটি বিশাল আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। বড় একটি গম্বুজের উভয় পার্শ্বে দুটি করে চারটি গম্বুজের অবস্থান। এই গম্বুজগুলো চার কোন বিশিষ্ট। মসজিদের সামনের দেয়ালের মাঝখানের দরজার দুপাশে দুটি সরুমিনার রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে রয়েছে তিনটি খিলান দেয়া দরজা। মাঝখানের দরজাটির আকার অন্যদুটি দরজার তুলনায় বড়। দরজাগুলো সোজা ভিতরে পশ্চিমে দেয়ালে আছে তিনটি মেহরাব। মেহরাবগুলোর সংলগ্ন স্থানটুকু অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য্যময় লতাগুলোর নক্শা ও সুন্দর হস্তাক্ষরে আরবী ভাষায় উত্কীর্ণ লিপি এখনো রয়েছে। মসজিদের উত্তর পাশের একটি কক্ষে পাথরের উপর মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর পায়ের ছাপ বিশিষ্ট কদম রয়েছে। তার পাশে আরেকটি পায়ের ছাপ বিদ্যামান যা নাকি বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রা.) এর বলে জনশ্রতি রয়েছে। কদমের ছাপদ্বয় মোঘল আমল থেকেই এখানে এভাবে সংরক্ষিত আছে।

৪৫৩ বছর হল বখশী হামিদ মসজিদের :

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৪৫৩ বছরের প্রাচীন স্থাপনা বখশী হামিদ মসজিদ ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে তৎকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মসজিদের রক্ষিত আরবি ভাষার শিলালিপিতে লেখা আছে- ‘বুনিয়াল মাসজিদুল মোকাররম ফি আহদি মুলক, ইসনাদুল মিল্লাতি ওয়াদ্দিন সুলতানুল মুয়াজ্জম সুলাইমান (কররানি) সাল্লামাহু আনিল আফাতি ওয়াল বালিয়্যাতি মুয়াররিখা তিসয়ু রমজান, খামসুন ওয়া সাবউন ওয়া তিসআতু মিয়াতি হিজরি আলাইহিস সাল্লাম।’ অর্থাৎ এই পবিত্র মসজিদ নির্মিত হয়েছে জাতি ও ধর্মের রক্ষক মহান বাদশা সুলাইমান কররানির যুগে। নির্মাণকাল ৩০ রমজান ৯৭৫ হিজরি।

১৫৬৮ সালের ৯ মার্চে নির্মিত এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদের রক্ষিত শিলালিপির তথ্য মতে, এটি সুলাইমান কররানি কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করার কথা থাকলেও জনমুখে বখশী হামিদের নির্মিত মসজিদ বলেই বেশ পরিচিত। যার কারণে স্থানীয়রা এটিকে বখশী হামিদ মসজিদ নামেই চেনেন।

মোগল স্থাপত্যে চট্টগ্রামের সাহেব বিবি মসজিদের অনুকরণে চুন ও সুরকি দ্বারা তৈরি করা হয়। মসজিদটিতে বড় ও ছোট ছোট তীরাকৃতির কয়েকটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে প্রাচীনকালের শান বাঁধানো একটি সুবিশাল পুকুর। মসজিদের পশ্চিমে কবরস্থান ও উত্তরে গড়ে উঠেছে সুবিশাল দারুল কোরআন মুহাম্মদিয়া শাহ আব্দুল হামিদ মাদরাসা ও এতিমখানা। সেখানে অন্তত প্রায় শতাধিক স্থানীয় শিশু বর্তমানে ইসলামি শিক্ষা গ্রহণ করছে।

এই বিভাগের আরও খবর