chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রেলে আউট সোর্সিংয়ের নামে টাকা হাতানোর ধান্ধা ঠিকাদারের!

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন কাজে আউট সোর্সিংয়ে যুক্ত আছেন প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক। তাঁরা অদক্ষ এবং নানা কাজে অনভিজ্ঞ হওয়ার পরও ঠিকাদাররা চুক্তি ভিত্তিক অল্প টাকায় তাঁদের দিয়ে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করিয়ে নেয়। এতে কিছুদিন না যেতেই নষ্ট হয়ে যায় মেরামত করা কাজগুলো।

অভিযোগ উঠেছে, সরকার থেকে আউট সোর্সিংদের বেতন শ্রমিক আইনে নির্ধারিত হারে নেওয়া হলেও তাদেঁর দেওয়া হয় যেনতেন ভাবে। এতে মাসে শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের পকেট গলে কোটি টাকা ঠিকাদারের পকেটে যায়।

রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আউটসোর্সিংয়ের নামে বাংলাদেশ রেলওয়ের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। অনভিজ্ঞ মাথা গণা শ্রমিক সাপ্লাই করে সরকারি এই সংস্থা থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করে নিলেও কাঙ্খিত শ্রম বা সেবা দিতে পারছেনা ওই শ্রমিকেরা। এতে আউট সোর্সিং বন্ধ করে আগের মতো টিএলআর (অস্থায়ী কর্মচারী) পদ্ধতিতে আমরা শ্রমিক নেওয়ার দাবি করেছি।

জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এম আর মনজু বলেন, আউট সোর্সিংয়ের শ্রমিক সরবরাহ করার জন্য প্রথমত ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ঠিকাদাররা মাথাপিছু ক্ষেত্র বিশেষে ৫৫০ ও ৫৭৫ টাকা দৈনিক হাজিরা নিয়ে থাকেন। সে হিসেবে তাঁদের মাসে ১৬ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পড়ে। আর ঠিকাদাররা শ্রমিকদের দিয়ে থাকেন মাসে মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে একজন শ্রমিক থেকে ঠিকাদার বেতন কেটে নিচ্ছেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এভাবে ২৫০০ শ্রমিকদের ঠকিয়ে মাসে (৭০০০ টাকা করে ২৫০০ শ্রমিকের বেতন) ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ঠিকাদাররা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু সরকার টাকা খরচ করলেও প্রত্যাশিত শ্রম দিতে পারছেনা আউট সোর্সিং এর  সেই শ্রমিকরা। কারণ ঠিকাদারেরা মুলত জনপ্রতি হিসেব করে শ্রমিক সরবরাহ করে থাকেন। সেখানে সেই শ্রমিকের কোন অভিজ্ঞতা আছে কিনা? সে সেই কাজ করতে পারবে কিনা, তা বিবেচনা করা হয়না।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ১০ জন অনভিজ্ঞ শ্রমিক একজন অভিজ্ঞ শ্রমিকের সমান কাজ করতে পারেন না বরং তারা অন্যের কাজে বিঘ্ন ঘটায়। আউট সোর্সিংয়ের অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে কাজ করানোর ফলে প্রায় সময়ই ঘটে থাকে দুর্ঘটনা। তাঁদের কাজের প্রতি কোন দায়বদ্ধতাও থাকেনা। কাজের প্রেসার দিলে তাঁদের পরের দিন আর পাওয়া যায়না। ফলে সেখানে নতুন একজনকে আনতে হয়। তাঁকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে সময়ের অপচয় হয়।

তিনি জানান, রেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টেকনিক্যাল বিষয় থাকে তাই কাজের অভিজ্ঞতা থাকাটা জরুরি। টিএলআর পদ্ধতিতে যাদের নেওয়া হয়েছে তাঁরা অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন, তাঁদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আবার চাকরি স্থায়ী হতে পারে এ আশায় তাঁরা কাজে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই রেলেকে লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আউট সোর্সিং বন্ধ করে আগের টিএলআর পদ্ধতিতে লোকবল নিয়োগ দরকার।

এদিকে গত ২৮ ডিসেম্বর পূর্বাঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে ডিজির কাছে রেলওয়ের রেজিষ্টার্ড ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ টিএলআর পদ্ধতিতে লোক নিয়োগের জন্য একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আউট সোর্সিং বন্ধ করে টিএলআর পদ্ধতিতে শ্রমিক নেওয়ার জন্য শ্রমিক নেতারা আমার মাধ্যমে ডিজি মহোদয়ের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর