chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রাতের আগুনে পুড়ে অঙ্গার খোকনের মা-বাবা, স্ত্রী-দুই সন্তান

গভীর রাতে দাউদাউ করে জ্বলছে টিনের ছোট্ট ঘর। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন খোকন বসাক। ভিতরে তখন পুড়ছেন খোকন বসাকের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৬৮), মা ললিতা বসাক (৫৭), স্ত্রী রাখি দে (৩৩), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শায়ন্তী বসাক (৬)।প্রতিবেশিরা ছুটে এলে খোকন বসাক জানান, মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানকে ঘর থেকে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করেও তিনি সফল হননি।

ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর পরে বাড়ি থেকে উদ্ধার হল খোকন বাসাকের বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানের পোড়া দেহ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মহাজন পাড়ার খোকন বসাকের বাড়িতে এ ঘটনা। অগ্নিদগ্ধ খোকনকে পুলিশ ভর্তি করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে খবর নিয়ে জানা গেছে, খোকনের শরীরের অনেক জায়গায় আগুনে পুড়ে গেছে। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।বৃহস্পতিবার গভীর রাতের ওই ঘটনার পরে শোকের ছায়া পারুয়া গ্রাম জুড়েই।

রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন চট্টলার খবরকে বলেন, রাত ২টার দিকে ওই বাড়িতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুন লাগার পর খোকন বসাক বাড়ি থেকে বের হতে পারলেও বাকিরা ভেতরেই পুড়ে মারা যান। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর নিহতদের বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে বের করা হয়। বাড়ির রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার ভোরে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কেঁদে চলেছেন খোকনের আত্মীয় স্বজনরা। পোড়া ঘরের আশপাশে জটলা করে দাঁড়িয়ে রাতের ওই ঘটনা নিয়েই আলোচনায় ব্যস্ত প্রতিবেশিরা। বৃহস্পতিবার রাতে খোকনের বাড়িতে আগুন লাগলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় পাশের বাড়িতে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।

প্রতিবেশি অঞ্জন জানান, রাতে অন্যান্য দিনের মতই খাওয়া শেষে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাড়ির দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ছিলেন খোকন। হঠাৎই আর্তনাদ শুনে ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে জাগিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখেন দাউদাউ করে জ্বলছে খোকনের বাড়ি।

অঞ্জনের কথায়, ‘‘আমরা প্রথমে খোকনের বাড়ির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যে-ভাবে আগুন জ্বলছিল, তাতে ভিতরে ঢোকা সম্ভব ছিল না। বাইরে থেকেই চিৎকার করে কাঙ্গাল বসাক, ললিতা বসাক, রাখি দে-কে বাড়ির বাইরে বের হতে বলছিলাম। কিছু পরে একাই খোকন বেরিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।”

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুয়ে এ দিন কোনও মতে খোকন জানালেন, রাতে খেয়ে
দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে শুয়েছিলেন তিনি। অন্য ঘরে তাঁর মা-বাবা শুয়েছিলেন। রাতে স্ত্রীর চিৎকারে ঘুম ভেঙে দেখেন, খাট-সহ ঘরের আসবাবপত্রে আগুন ধরেছে। কাঞ্চনের কথায়, ‘‘ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ল। স্ত্রী-মেয়েদের নিয়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। ঘন ধোঁওয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। কোনও রকমে দরজা খুলে বের হই।’’

আগুন লাগার পরে তাদের চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে আসেন। গ্রামবাসীদের তৎপরতাতেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।

প্রতিবেশি অনিল, বিধান, সুধীর বলেন, ‘‘সামনের পুকুর থেকে জল এনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করি। কিন্তু যে-ভাবে আগুন লেগেছিল, তা নেভাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।’’ ওই বাড়ির উপর দিয়েই গেছে বিদ্যুৎবাহী তার। আগুন সেই তারেও ছড়িয়েছিল। কিন্তু তা দ্রুত ট্রান্সফর্মার বন্ধ করে দেওয়ায় আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, আগুন নেভানোর পরে বাড়ি থেকে খোকনের মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তানের পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়। আগুনে গোটা বাড়িই পুড়ে গিয়েছে।

নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর