আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে হাছান মাহমুদের পদোন্নতি
দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে টানা দুইবার দায়িত্ব পালন শেষে পদোন্নতি দিয়ে দলটির তিন নম্বর যুগ্ম সম্পাদক পদে ছিলেন দলের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে ফের পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। নতুন কমিটিতে তিন নম্বর যুগ্ম সম্পাদক থেকে এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের হ্যাট্রিক সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলটির ২১তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে (কাউন্সিল) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে তার নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ হাসিনা।
একই অধিবেশনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে।
পরে কাউন্সিলে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে মনোনীত নেতাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে সম্পাদকমণ্ডলীর নাম ঘোষণা করেন।
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বিদায়ী কমিটির চার জন বহাল থাকার কথা বলেন। নাম ঘোষণার সময় তিনি বিদায়ী কমিটির তিন নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদের নাম এক নম্বরে ঘোষণা করেন।
পর্যায়ক্রমে তিনি আগের কমিটির এক নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নাম দুই নম্বরে, চার নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম তিন নম্বরে এবং দুই নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. দীপু মনির নাম চার নম্বরে ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামের খ্যাতিমান আইনজীবী মরহুম নুরুচ্ছফা তালুকদারের বড় ছেলে ড. হাছান মাহমুদের জন্ম ১৯৬৩ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে। তার বাবা চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং দুই মেয়াদে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ড. হাছান মাহমুদ দুই কন্যা ও এক ছেলের জনক। রাজনীতি ও সামাজিক জীবনে অনেক বাধাবিপত্তি মোকাবেলা করে আজকের অবস্থানে উঠে এসেছেন তিনি।
ছাত্র জীবনে তিনি প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম শহরের জামাল খান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৮ সালের শেষার্ধে চট্টগ্রাম সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৮১ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে তিনি গ্রেফতার হন।
পরে ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন হাছান মাহমুদ। আশির দশকের শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন মেধাবী এই ছাত্রনেতা।
১৯৯২ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য মনোনীত হন তিনি। ২০০১ সালের অক্টোবরে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশেষ সহকারী হিসেবে।
২০০২ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই দায়িত্ব পালন করেন ড. হাছান মাহমুদ।
২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থায় যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সামরিক সমর্থিত সরকার গ্রেফতার করেন তখন ড. হাছান মাহমুদ দলীয় প্রধানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন।
২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সাথে পালন করেন। ড. হাছান মাহমুদ ২০১২ ও ২০১৬ সালের সম্মেলনে পরপর দুইবার দক্ষতা ও সফলতার সাথে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ভূমিকার জন্য ৫ অক্টোবর ২০১৫ সালে “গ্রিন ক্রস ইন্টারন্যাশনাল” সাধারণ অধিবেশনে ড. হাছান মাহমুদকে “সার্টিফিকেট অব অনারেবল মেনশনে” ভূষিত করে।
চখ/আর এস