chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সুস্থ থাকার আশা জাগায়  ‘ডিসি হিল’

ঘড়িতে ‍সকাল ৭ টা বেজে ২৪ মিনিট। যত দূর চোখ যায় ঘন কুয়াশায় আছন্ন। রাত্রির নিস্তব্ধতাকে কাটিয়ে শুরু হয়েছে ব্যস্ত একটি দিন। হিম বাতাস আর কুয়াশা আছড়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম নান্দনিক স্থান  ‘ডিসি হিলের বুকে। ভোরের আলো ফুটতেই এখানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সমাগম ঘটে যায়। এর মধ্যেই  ‘উজ্জীবন’ নামে একটি সংগঠনের কার্যক্রমে চোখ  আটকে যায়।  সেখানে কিছু মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়। কাছে যেতে দেখা গেল, একজন শারীরিক কসরত  নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। অন্যরা সেই কসরত  অনুসরণ করে অনুশীলন করছেন। কেউ অনবরত হাঁটছেন, কেউ দড়ি দিয়ে লাফাচ্ছে , কেউবা পুশ-আপ করছেন।‘উজ্জীবন’ সদস্যের পাশাপাশি সেখানে দেড়শোর মতো নারী, তরুণ-প্রবীণের সমাগম ঘটে  রোজ।

শুক্রবার(২৩ ডিসেম্বর) এমনই চিত্র দেখা গেলো চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবন ডিসি হিলে। তবে প্রতিদিন সকালে এমন চিত্রের দেখা মিলবে ।  বেলা বাড়ার  সঙ্গে সঙ্গে এর চারপাশে লোকে লোকরণ্যে হয়ে উঠে। প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে প্রায় ১০ টা পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে। আবার বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত চলে হাঁটাহাঁটি।

ইংরেজ শাসনামলের গোড়ার দিকে `ডিসি হিল‘  চাকমা রাজার বাড়ি ছিলো। পরবর্তীতে সেখানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবন স্থাপিত  করা হয়। তখন থেকে এটি ডিসি হিল নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম জীবদ্দশায় এখানে অবসর সময় কাটাতেন।  জাতীয় কবির এই আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০৫ সালের ১০ এপ্রিল ডিসি হিলের নতুন নামকরণ করা হয় নজরুল চত্বর।

১৯৭০ এর দশকের শেষভাগ থেকেই এখানে  পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উৎযাপন হয়ে আসছে। ১৯৭৮ সালে ইস্পাহানি পাহাড়ের পাদদেশে পহেলা বৈশাখ উ’যাপিত হলে, পরবর্তীতে ডিসি হিলে সরে আনা হয়।  পরে পার্ক ঘোষণা করা হলে, নিয়মিত দর্শনার্থীর ভিড় বাড়তে থাকে। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)।

সকালে ডিসি হিলে হাঁটতে এসেছেন নারীরা

 

চট্টগ্রামে যেখানে প্রতিনিয়ত পার্কের সংখ্যা সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানে এত বড় মুক্ত প্রাঙ্গণে হাঁটটে পেরে আনন্দিত দর্শনার্থীরা। পার্ক হওয়ায় নানা ধরনের মানুষের অবাধ বিচরণ হয়। মাঝে মাঝে ছিনতাই, মাদকগ্রহণসহ অপ্রীতিকর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

হাঁটতে আসা চুয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রিন্সিপাল রিমু মজুমদার বলেন, বাসার কাছে হওয়ায় ১৯৯২ সাল থেকে এখানে হাঁটাচলা করি। তখন এমন রাস্তা, মানুষের সমাগম ছিলো না। ডিসির বাড়ির ছোট্ট একটা রাস্তাতে হাঁটতাম। কিন্ত এখন রাস্তা-পার্ক হয়েছে। সেই সঙ্গে অপরাধও বেড়েছে। মাঝে মাঝে ছিনতাই- মাদক সেবনসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হয়। এছাড়া  ক্লাস বাদ দিয়ে ছাত্র –ছাত্রীরাও আড্ডাতে মত্ত থাকে। যার ফলে অনেকে এখানে হাঁটতে আসতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। আমরা প্রবীণ, আমাদের ডাক্তারের কথা মতো নিয়মিত হাঁটাচলা করতে হয়। প্রশাসনকে এর নিরাপত্তা বাড়াতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

নিয়মিত ডিসি হিলে হাঁটতে আসেন নগরের মহসিন কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল অঞ্জন রন্দ্বীপ। তিনি বলেন, প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশো লোকের সমাগম হয়। ছোট রাস্তায় অনেকে এলোমোলা ভাবে হাঁটতে থাকেন। কেউ যায়, কেউ আসে। যার কারণে ডায়বেটিস রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ তাদের একটা নির্দিষ্ট গতিতে হাঁটতে হয়। এছাড়া যারা হাঁটতে আসেন, এটা-সেটা খেয়ে খোসা ফেলে যায়। যার কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। হাঁটার সংগঠন `উজ্জীবন’কে নিজে থেকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের ময়লা নিজে পরিষ্কার করতে হবে। প্রসাশন আমাদের এত বড় একটা খোলা মাঠ দিয়েছে। রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, অপ্রীতিকর ঘটনা বন্ধে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। গত বৃহস্পতিবার(২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পরে অভিযান চালিয়েছি। রাত হওয়ার পরও আড্ডায় ব্যস্ত থাকা কিশোরদের ঘরে পাঠিয়ে দেই। চট্টগ্রামে পার্কের সংখ্যা কম। তাই এই ছোট জায়গায় অসংখ্য মানুষের সমাগম হয়। তবে যারা হাঁটতে আসেন তারা যেন নির্বিঘ্নে হাঁটা চলা করতে পারে তার ব্যবস্থা করা করবো।

চখ/নচ/আরএইচকে

 

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর