chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সুই সুতোর সঙ্গে আলামিনের বিশ বছর

সকাল ১০টা বাজে ৫ মিনিট। প্রতিদিনের মতো নিজের ছোট্ট দোকান খুলে আপন মনে পরিষ্কার করছেন মোহাম্মদ আলামিন(৩৫)। আড়াই-তিন ফুটের টেবিলে একটি সেলাই মেশিন, একটি চেয়ার, সুই–সুতো, কাপড় চোপড়ে ভর্তি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি সেলাইয়ের কাজ করেন। তবে নতুন পোশাক সেলাই নয়, কেনা পোশাক শরীরের মাপ অনুযায়ী ঠিক করে দেওয়াটাই তার পেশা। সুই সুতোর সাথে কাটিয়েছে বিশটি বছর। 

বৃহস্পতিবার (১৫ডিসেম্বর) নগরীর জহুর হকার মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় বসে চট্টলার খবরের সঙ্গে কথা হয় আলামিনের। তিনি বলেন,  ‘প্রতিদিন সকাল দশটায় দোকান খুলি। ঘরে ফিরতে বেজে যায় রাত এগারোটা। সারাদিন সেলাই করে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে সংসার কোনমতে চালিয়ে যাচ্ছি।’

এতদিন ভালোই ছিলাম। কিন্ত দ্রব্যমুল্যর দাম বেড়ে যাওয়ায় তেমন কেনাকাটা করছে না। আগের চেয়ে এখন কাজ কমে গেছে। অনেক সময় ক্রেতার জন্য অলস হয়ে বসে থাকি।

কুমিল্লা বাড়ি হলেও জীবিকার টানে ২৫ বছর আগে চট্টগ্রামে চলে আসেন তিনি। আলামিনের মতো অনেকে সুই সুতোর সাথে মিতালি গড়ে তুলেছেন দশ বিশ বছর।

দ্রব্যমু্ল্যর ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের অনেকটা কষ্টের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে। আলামিন আরও বলেন, বাজারে একটা ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে কোনদিন ফেরত আসে না। কাঁচা- বাজার, মাছ-মাংস, চাল-ডাল, সন্তানদের শিক্ষা উপকরণ ও ফি বেড়েছে। বর্তমান বাজারের সাথে খাপ খাইয়ে চলাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সবকিছুতে সংকুচিত করতে হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বেড়ে গেলে দীর্ঘদিন দোকানপাট বন্ধ ছিলো। তখন কাজ না পেয়ে দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়েছে ।

দোকান কেমন চলছে এমন প্রশ্নে হতাশার কথা জানালো আলামিন। তিনি বলেন, ‘আগে অনেক মানুষ আসতো কাপড় নিয়ে। নতুন একটা প্যান্ট নিলে আমাদের কাছে ছুটে আসতো। কিন্ত এখন খাবারের চাহিদা মেটাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। কেনাকাটা কমায় আমাদেরও আয় কমে গেছে। এভাবে কতদিন চলতে হবে বুঝে উঠতে পারছি না!’

অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় সকাল দশটায় কাজ শুরু হয়। তবে তখন কাস্টমার কম থাকে। বিকাল গড়াতেই জমজমাট হয়ে্ উঠে। সেখানে ব্যাগ, জামা, প্যান্ট, কাঁথাসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের পণ্য সেলাই হয়। প্রতিদিন হাজার খানেকের মতো কাজ হয়। প্রতি কাজে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকাও নেওয়া হয়।

এই সুই সুতোর সাথে মিশে রয়েছে তাদের সুখ- দুঃখ। সুইয়ে যত সুতার টান পড়বে বাড়বে তাদের আয়, ফিরবে তাদের হাসি।

নচ/চখ