chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

জাহাজে ভাসছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টন পণ্য

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের মুখে দেশের ৪১ টি ঘাটে প্রায় দুদিন ধরে ভাসছে ৭১৫ টি লাইটারেজ জাহাজ। এসব জাহাজে ডাল, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ৯ লাখ ৫০ হাজার ২৯৬ টন পণ্য রয়েছে। এসব জাহাজে ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে রয়েছে সার, কয়লা, পাথরসহ শিল্পের কাঁচামালও। একই সঙ্গে বন্দরের বর্হিনোঙরে পণ্য নিয়ে আটকা পড়ে আছে বিদেশী জাহাজ। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা জানালেন, পণ্য ওঠা নামা বন্ধ থাকায় নতুন করে বাজারে পণ্যেও দাম বেড়ে যাবে।

বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে রোববার রাত থেকেই দেশব্যাপী কর্মরিতি শুরু করে লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা। তাদের অনড় অবস্থানের মুখে কর্ণফুলী নদীর ১৭টি ঘাটসহ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে স্থবিরতা দেখা দেয়। দাবি আাদায়ে গতকাল মিছিল ও সভা করছেন নৌযান শ্রমিকরা। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে ঘাটের আশেপাশে অবস্থান করছেন। অপরদিকে নাবিকরা লাইটারেজ জাহাজেই অলস বসে আছেন। ফলে নৌ ঘাটে শ্রমিকদের চিরচেনা ব্যস্ততা আর হাঁকডাক নেই। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের বর্হিনোঙরের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে । নৌযান শ্রমিকরা বলছেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় কর্মবিরতির মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের সচিব এম এ রনি বলেন, দ্বিতীয় দিনের মতো আমাদের কর্মবিরতি চলছে। কিন্তু লাইটারেজ মালিক কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসনের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। উল্টো আমাদের আন্দোলন অযৗক্তিক বলে প্রচার করছে। কাজ বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই কাজ করে শ্রমিকদের সংসার চলে। কিন্তু বর্তমান বাজার দরে এই বেতনে সংসার চলে না। দাবি আদায়ের সন্তোষজনকে সাড়া পেলেই আমরা কাজে ফিরবো।

জাহাজে ভাসছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টন পণ্য

তবে শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী ট্রান্সপোর্ট সেলের নিবার্হী পরিচালক মাহবুব রশিদ। তিনি বলেন, আন্দোলনের কারণে সারাদেশে নৌ রুটে স্থবিরতা বিরাজ করছে। জাহাজে পণ্য ওঠা নামা কার্যত বন্ধ থাকায় নাবিক ও শ্রমিকরা অলস বসে  আছেন। সরবরাহ বন্ধ থাকায় নতুন করে বাজারে সব ধরনের পণ্যে দাম আবারও বাড়বে। শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের কিছু করার নেই।

এদিকে পণ্যের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জানালেন চিটাগং চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, শ্রমিকদের কাজ বন্ধ থাকার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় ভেঙে পড়েছে। বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ খালাস বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ লাখ ডলারের লোকসান গুনতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ঘাটে পড়ে থাকা জাহাজের ক্ষতিও গুনতে হবে আমাদের। আমরা মন্ত্রণালয়ে কথা বলে  সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, আন্দোলন করে আসা শ্রমিকদের দাবি দাওয়া হলো নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দেওয়াসহ শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ দেশের স্বার্থবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়নের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌ-পথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ করা, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেওয়াসহ ভারতীয় সীমানায় সব প্রকার হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০ শতাংশ কার্যকর করে সব লাইটার জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌ-পরিবহন অধিদফতরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।

তবে বন্দরের বহিনোঙরে অবস্থান করা জাহাজের বক্তব্যের বিষয়ে বন্দরের সচিব ওমর ফারুককে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

আরকে/মআ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর