chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ঘুরে এলাম ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘লালবাগ কেল্লা’

ঘুরে এলাম ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘লালবাগ কেল্লা’ লালবাগ কেল্লা ঢাকার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। এটি রাজধানী ঢাকার দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বংশাল থানার লালবাগ নামক জায়গায় অবস্থিত। লালবাগ কেল্লার প্রাচীন নাম ছিল ‘কিল্লা আওরঙ্গবাদ’।

আজ ছুটিরদিনে (২৬ নভেম্বর) দেখে এলাম লালবাগ কেল্লা। লালবাগ কেল্লার ঢুকার পরেই লক্ষ্য করবেন সরু রাস্তার দু’পাশে নানারকম ঝাউগাছ আর পাতাবাহারের সারি। গোলাপ, গাদা, রঙ্গনসহ রয়েছে আরও বাহারি ফুলের গাছ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র যুবরাজ আজম শাহ বাংলার সুবেদার হয়ে ১৬৭৮ সালে ঢাকায় আসেন ও তিনি কিল্লা আওরাঙ্গবাদ নামে একটি প্রাসাদ দুর্গ নির্মাণের কাজ হাতে নেন। তবে তিনি এই দুর্গ নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেননি। কারণ মারাঠাদের মোকাবেলার জন্য সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। ফলে তিনি দুর্গটির নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ঢাকা ত্যাগ করেন। পরে ১৬৮০ সালে শায়েস্তা খান দ্বিতীয়বার বাংলার সুবেদার হয়ে ঢাকায় আসেন। তখন কেল্লার কাজটি পুনরায় শুরু হয়। তিনি এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন লালবাগ কেল্লা। তবে কেল্লার কাজ শেষ না করতেই সুবেদার শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরিবিবি মারা যান। তাকে সেখানেই সমাধিস্থ করা হয়। আর এজন্য তিনিও এই কাজ শেষ করতে পারেননি। লালবাগ কেল্লা দেশের অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান। এর আয়তন ১৯ একর।

লালবাগ কেল্লার যে ছবিটি বেশি ব্যবহৃত হয় তা পরীবিবির সমাধি। এটি চতুষ্কোণ আকৃতির। বিশাল আকৃতির তিনটি দরজা আছে। এর ভেতর একটি দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। পরীবিবির সমাধীকে অনেকে আবার পরীবিবির মাজার বলে। এর ভেতরে আছে ৯টি কক্ষ। একটি গম্বুজও আছে, যা আগে সোনার ছিলো, এখন সেটি তামা দিয়ে মোড়ানো। এছাড়া দুর্গটির ভেতরে একটি বিশাল পুকুর আছে। যা এখন পানিশুন্য। প্রথম আমাদের লালবাগ কেল্লায় আসা। মোঘল স্থাপত্য যে এতো সুন্দর আজ জানলাম। এর আগে কখনো একই স্থাপনায় এতো কারুকার্যের ব্যবহার লক্ষ্য করিনি।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, লালবাগ কেল্লায় ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টিপাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রং-বেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো মোঘল ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন বৈচিত্র্যময় সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। সূর্য যখন হেলে পড়ে তখন লালবাগের আসল সৌন্দর্য চোখে ধরা পড়ে। যদিও আমি গিয়েছিলাম যখন সূর্য মাথার উপর। গরম-ক্লান্তি লাগলেও প্রকৃতি ও নিদর্শন দেখায় ভুলেই গিয়েছি গরমের কথা। লালবাগ কেল্লায় শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ও দরবার হল বর্তমানে লালবাগ কেল্লা জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এই দরবার হল থেকেই তিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। জাদুঘরে অনেক কিছুই রয়েছে দেখার মতো। মোঘল আমলের পাণ্ডুলিপি, মৃৎশিল্প, কার্পেট, হস্তলিপি ও রাজকীয় ফরমানসহ আছে মোঘল আমলের বিভিন্ন সময়ের হাতে আকা ছবি যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

শায়েস্তা খাঁর ব্যবহার্য নানান জিনিসপত্রও সযত্নে আছে সেখানে। এছাড়া তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, সে সময়কার প্রচলিত মুদ্রাও আছে জাদুঘরে। ৩০০ বছরের ঐতিহ্য কীভাবে এখনো টিকে আছে তার আপন মহিমায় এটা দেখতে হলে অবশ্যই আপনাকে আসতে হবে লালবাগ কেল্লায়। সজল খান লেখক: সাংবাদিক ও ব্যাংকার