চট্টগ্রামে সাজ সাজ রব, সর্বত্র উৎসবের আমেজ
নগরজুড়ে ব্যস্ততা। কেউ দেয়ালে রঙ তুলিতে, কেউ আবার প্লাস্টার করতে। কেউবা সড়ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নে কাজে মনোনিবেশ। প্রস্তুতি চলছে তোরণ ও অভ্যর্থনা গেটের। সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও অফিস। সড়কের ডিভাইডার, পুরাতন দেয়ালগুলো ধুয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। নগরের প্রধান প্রধান সড়ক ছাপিয়ে অলি-গলিতে ছেয়ে গেছে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিআরবির সাত রাস্তার মুখ এবং টাইগারপাশ মোড়ে বাঁশ দিয়ে বানানো হচ্ছে বড় গেইট । দেড়শো শ্রমিক রঙ তুলির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারই পাশে দেয়ালে তুলি দিয়ে আছড় কাটছেন শিল্পীরা। সাদা, লাল , হলুদ এবং সবুজ রঙয়ে সেজে উঠছে দেওয়াল। পলোগ্রাউন্ড মাঠে নতুন রুপ দিতে চলছে কর্মযজ্ঞ। আট ফুট উচু বাঁশ দিয়ে পুরো মাঠ ঘেরা হয়েছে। সেখানে কিছু দিন পর ব্যানার ফেস্টুনে সেজে উঠবে। আগামী দশ থেকে ১২ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলছেন নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাবেশ ঘটাতে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগমের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। জনসমাবেশের বাইরে আশেপাশের এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার জন্য ৩০০ মাইক লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। সাত ফুট উঁচু মঞ্চ তৈরির কাজ করা হবে। যার দৈর্ঘ্য হবে ১২০ ফুট ও প্রস্ত ১৪০ ফুট। প্রধান অতিথির সঙ্গে ২০০ অতিথি বসার সুযোগ পাবেন মঞ্চে। জনসভায় নগরের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা অংশ নিবে।
আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের মাঠে দলীয় জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসার খবর কানে পেতেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে দিনটি ঘিরে। কয়েক ঘণ্টার জন্য চট্টগ্রামে আসা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি ও কর্মযজ্ঞ চলছে দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনে। দফায় দফায় সমন্বয় সভায় বসছে সেবা সংস্থাগুলো। দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহানো সড়কের খানাখন্দ সংস্কার ও মেরামতে হাত পড়েছে। এর সঙ্গে রাত দিন এক করে নেতাকর্মীরা কাজ করে চলেছেন সমাবেশ সফল করতে। চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝেও। এমন সাজগোছ দেখে নগরবাসীর প্রত্যাশা হয়তো, প্রধানমন্ত্রী প্রতি বছর চট্টগ্রামে আসলে বদলে যাবে শহরটি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী জনসমাবেশের জন্য চট্টগ্রামে আসছেন। আমাদের আনন্দের মাত্রা বুঝানো যাবে না। কোনো কমতি রাখা হবে না। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিবেন। দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে তিনি জনগণের কাছে বীর চট্টলা ও দেশের সম্পর্কেও বার্তা দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দিন রাত নিরলনসভাবে কাজ করছেন। সবার লক্ষ্য একটাই বড় জনসমাবেশের মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে চাই আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে ছিল, আছে থাকবে। আগামী নির্বাচন সব দলের জন্য চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার জন্য সবাই উন্মুক হয়ে আছে। দেশের মানুষকে বেছে নিতে হবে তারা কী উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখবে? নাকি আবারও স্বাধীনতা বিরোধী ও বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস ও সীমাহীন দুর্নীতিতে ফিরে যাবে।
এদিকে জসমাবেশের মাঠ পরিদর্শন শেষে রেলপত্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম গণজমায়েতে আসা বিপুল সংখ্যাক মানুষ কোথায় রাখবেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা কাউকে ভাড়া করে আনবো না। চট্টগ্রাম শহর ও আশেপাশের উপজেলার মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেবেন। বিপুল সংখ্যাক মানুষ কোথায় জায়গা দেবো, সে চিন্তা করতে করতে হচ্ছে। সবাই প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনার অধীর অপেক্ষায়। তারা নিজ থেকে থেকে আসবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সামনে রেখে গেল ১৭ নভেম্বর চসিকের সম্মেলন কক্ষে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমস্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যে আন্তরিতা দেখিয়েছেন তাঁকে স্বাগত জানাতে নগরীকে পরিপাটি করে সাজানো হচ্ছে। জনসভায় প্রবেশের পথ সুগম ও জনসাধারণের সুবিধার্থে মাঠের ভেতরে ও আশেপাশে সুপেয় পানি, ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করা হবে।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশ ঘিরে নিরিবিচ্ছন্ন নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে জানালেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। তিনি বলেন, বিশাল গণজমায়েতকে সামনে রেখে যাবতীয় নিরপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের বাস, মাইক্রোবাস ও ভিআইপিদের প্রাইভেটকার পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ। শিরগিরই গণম্যাধমে বিস্তারিত জানাতে হবে।
চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবশে করেছিল বিএনপি। দলটির দাবি করে ওই সমাবেশে বিপুল সংখ্যাক জনসমাবেশ হয়েছির। এরপর থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল সংখ্যাক জনসমাগমের টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করে। চট্টগ্রামেও সেই ধারা বজায় রেখে এগোচ্ছে দলটি। এর আগে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবেশ অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মআ/চখ