chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মরিয়মরা গোস্তের স্বাদ মেটায় মুরগির ‘উচ্ছিষ্ট’ দিয়ে

জুলকার নাঈন: সাদা ধপধপে শাড়ি পড়ে ষাটোর্ধ মরিয়ম বেগম নগরের দেওয়ানহাট মুরগির দোকানের সামনে ফেলফেল করে কি যেন দেখছে। এদিক ওদিকে তাকিয়ে দোকানদারকে বললেন, বাবা আমাকে আধা কেজি মুরগির পা ও চামড়া দেন। অনেকটা লাজুক ভাবে অল্প টাকা দিয়ে কিনে এলাকা ছাড়তেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাঁর

তিনি বলেন, মুরগির গোস্ত খেতে ইচ্ছে করছে। টাকা কই? গোস্তের স্বাদ মুরগির পা ও চামড়া দিয়ে মিটাতে হবে।

তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ষ্ট্রোক হওয়া অসুস্থ শরীর নিয়ে জীবন চলে না। এক সময় বাসায় জি এর কাজ করতেন। এখন পুরোটাই বেকার। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গরুর গোস্ত বড় লোকের জন্য। এখন আগের মত কাজ করতে পারেন না তাই ছোট বোন যা দেয় তাই খান। না দিলে নাই।

মরিয়ম বেগম বলেন, গত ঈদের দিন মানুষের কাছে ভিক্ষা করে কয়েক টুকরা গোস্ত পেয়েছেন। ওইটাই শেষ গোস্ত খাওয়া।’

সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় নিম্ম আয়ের মানুষের কষ্টের শেষ নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। শুধু মরিয়ম নয়, পলাস, জাহেদা, নোয়া মিয়া, আবু জাহেদসহ অনেক লোককে দেওয়ানহাট মোড়ের মুরগির দোকান থেকে কম মূল্যে মুরগির উচ্ছিষ্ট নাড়ি ভূড়ি, পা, কলিজা, চামড়া কিনতে দেখা যায়। তাঁরা জানালেন, কিছু না কিছু খেয়ে পরে বাচঁতে হবে। আর্থিক দুর্দশা সময় আর কি করা।

মুরগি ব্যবসায়ী মাসুমা বেগম বলেন, বাজারে অনেক গরিব মানুষ চামড়া আর ঠ্যাং (পা) কেনার জন্য আসেন। যাদের মুরগি কেনার সাধ্য নেই তারাই মুরগির গিলা-কলিজা ,পা, গলা, চামড়া, মাথা আর নাড়িভুড়ি কিনে নিয়ে যায়। ১১০ টাকায় মেলে প্রতি কেজি গিলা, কলিজা আর ৬০ টাকায় পা-চামড়া।

সাহেলা বেগম নামের এক শ্রমজীবি নারী বলেন, সবজির তো কাছেই যাওয়া যায়না। ব্রয়লার মুরগির দাম হাতের নাগালেই ছিল এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাত জোটে তো তরকারী জোটেনা।

মুরগির কাটারছেড়া কারিগর সবুজ বলেন, সাধারণ মানুষ মুরগিও আর কিনতে পারছেনা। খেটে খাওয়া মানুষ মাছ-গোস্তের কথা ভাবতেই পারছেনা।

মুরগির দোকানি আজম জানান, ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি ২০০ টাকা। কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে সোনালী মুরগির এখন কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা।

চমড়া ও পা বিক্রেতা আবদুল আজীজ জানান, প্রতিদিন মুরগির কাটাছেড়া করেন। তাতে তাদের ভালোই চলে। অতিরিক্ত লাভের জন্য গিলা কলিজা আর চামড়া বিক্রি করেন।

এই বিভাগের আরও খবর