chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

টানাপার্টির টক্করে অসহায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল

বিমল চন্দ্র চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে নোয়াখালী অভিমুখী আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে তাঁর বোন, ভগ্নিপতিকে উঠিয়ে দেয়। একটু পরে  তার বোনের গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুই ছিনতাইকারী সাফিয়া আক্তার ও নাসিমা আক্তারকে অন্য যাত্রীরা ধরে ফেলে। পরে তাদেরকে আখাউড়া রেলওয়ে থানায় সোপর্দ করা হয়। গত ৭ অক্টোবরের এ ঘটনা।

এ ছিনতাইয়ের ঘটনা বিক্ষিপ্ত নয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নিয়মিত  যাতায়াত রয়েছে এমন যাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়কে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে। যার সাথে জড়িত রয়েছে রেল চালক, হেলপার, জিআরপি পুলিশের কতিপয় সদস্যরা।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে রেল পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিটি রেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারি রয়েছে। এমনকি যাত্রীবেশে গোয়েন্দারা এবং ১২৩০ জন জিআরপি পুলিশ রেলওয়ের নিরাপত্তা দিতে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। ফলে পূর্বাঞ্চলে রেল কেন্দ্রিক অপরাধ অনেকটা কমে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে , রেল কেন্দ্রিক দিনদিন ভয়ঙ্কর হিংস্র হয়ে উঠছে টানা পার্টির সদস্যরা। দীর্ঘদিন ধরেই টানা পার্টির সদস্যরা রাতে ট্রেনের ছাদে উঠে এবং রেল লাইনের পাশ থেকে তাদের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। এসব অপরাধীকে বাধা দিলেই তারা যাত্রীদের হত্যা করে ট্রেন থেকে নির্জন স্থানে ফেলে দিচ্ছে। গত দুই  মাসে ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে রেললাইনের আশপাশের কিছু নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে বেশ কয়েকটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

টানাপার্টির টক্করে অসহায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল

এছাড়া ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। অভিযোগ রয়েছে,কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে ট্রনের যাত্রীদের নিরাপত্তা আজ চরম ঝুঁকির মুখোমুখি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুকের কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে পূর্বাঞ্চলের রেলপথ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৪০টি ষ্টেশনে টানাপার্টির দেড় শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। ঢাকা থেকে ট্রন ছাড়ার পর কাছাকাছি কোনো এলাকায় গেলে টানাপার্টির সদস্যরা ট্রেনের টার্গেট করা যাত্রীদের আক্রমণ করে। তারা সুযোগ বুঝে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে কিংবা টান দিয়ে ব্যাগ বা অন্যন্য জিনিসপত্র  লুট করে নেয়। এরপর সুযোগ বুঝে নেমে পড়ে ট্রেন থেকে। ছিনতাইয়ের সময় কোনো যাত্রী বাধা দিলেই দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে টানাপার্টির সদস্যরা।

রেল গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ছিনতাইপ্রবণ এলাকা হিসেবে প্রায় ৪০টি ষ্টেশন তারা চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে কুমিরা, চিনকি আস্তানা, ফাজিলপুর, ফেনী, শর্শদী, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, রাজাপুর, লালমাই, কুমিল্লা,কসবা, গঙ্গাসাগর, আখাউড়া, পাঘচাং, ব্রাক্ষণবাড়িয়া,

তালশহর, ভৈরব বাজার, দৌলতকান্দি, ঘোড়াশাল,আড়িখোলা, জিনারদী, আজমপুর, ইটাখোলা, কুলাউড়া, মাইজগাঁও, সীতাকুন্ড, ভাটিয়ারি, মস্তান নগর উল্লেখযোগ্য।

ঘটনা-১

গত ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেন করে চট্টগ্রাম কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আতিশা ইবনাত শহর থেকে চবিতে যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি নগরীর অক্সিজেন মোড় এলাকা পার হচ্ছিল। এ সময় মোবাইল ছিনতাই করে এক যুবক চলন্ত শাটল থেকে লাফ দিয়ে নেমে যায়।

আতিশা জানান, প্রথম থেকেই শাটলে তাঁদের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিলেন ওই যুবক। তিনি বসেছিলেন দরজার পাশের একটি সিটে। অক্সিজেন মোড় অতিক্রম করার সময় তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দেয় যুবকটি।

আতিশা বলেন, থানায় অভিযোগ করিনি। কারণ হিসেবে বলেন, থানায় মামলা করলে হয়রানির শিকার হতে হয়।

ঘটনা-২

গত ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে একটি  ট্রেন চট্টগ্রাম নগরের কদমতলী মোড় অতিক্রম করার সময় চট্টগ্রাম  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথমবর্ষের ছাত্রী নন্দিতা দাসের মোবাইল ফোনটি নিয়েই চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নেমে যায় এক ছিনতাইকারী। এসময় ছাত্রীও ছিনতাইকারীর পিছু পিছু চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দেন। তবে ছিনতাইকারীকে ধরতে সক্ষম হননি তিনি।

ঘটনা-৩

গত ৭ জুলাই  চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় ট্রেনে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের বাসিন্দা সৌরভ ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা ওই যাত্রীর ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগের মধ্যে ৪ হাজার টাকা, দামি মোবাইল ফোন ও পরিধানের কাপড় ছিল।

সৌরভ অভিযোগ করে বলেন, ‘কুমিরা স্টেশনের কাছাকাছি ওই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। টানাপার্টির সদস্যরা ট্রেনে আমার পাশে অবস্থান নিয়ে গাড়ি থামার সময় হঠাৎ ব্যাগটি টানদিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করতে গেলে তারা জিআরপি থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে মামলা নেয়নি। এরপর ইচ্ছে করেই তিনি আর জিআরপি থানায় যাননি।

রেল সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথে জিআরপি পুলিশের ১২৩০ সদস্য দিয়ে ১২টি থানা এবং ১৭টি ফাঁড়ি চালানো হয়। পাশাপাশি ট্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্বও তারাই পালন করেন। এসব কারণে প্রতিটি ট্রেনে ৩-৪ জনের বেশি পুলিশ ও আনসার সদস্য দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে টানাপার্টিসহ অপরাধীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে।

এই বিভাগের আরও খবর