chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে পথে পথে অপচিকিৎসা

 সাইফুদ্দিন মুহাম্মদঃ নগরের কোতোয়ালি থানার অফিসের অদূরে একটি ভ্যানে ওষধের পসরা সাজিয়ে বসেছেন আবু ইউছুফ। তিনি চর্ম,দন্ত, ডায়েবেটিক, ক্যান্সার ও যৌনরোগের চিকিৎসক বলে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছিলেন। একটি মাইকে তার ওষুধের গুণাবলি বর্ণনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। উৎসুক পথচারীরা কেউ কেউ তার ওষুধও কিনছিলেন।

একই এলাকায় জোঁকের মেলা বসিয়েছেন ফজল আহমদ। টেবিলের ওপর সাজানো কাচের বোতলে শোভা পাচ্ছিল জোঁক। টেবিলের নিচে বড়সড় একটি গামলায়ও জোঁক কিলবিল করছিল। হ্যান্ডমাইকে জোঁকের তেলের গুণাগুণ করছিলেন তিনি যৌন উত্তেজক ভাষায়। এখানে লোকজনের ভিড় অপেক্ষাকৃত বেশি। জোঁকের গুণগান গাইতে গাইতে তেলও বিক্রি করছিলেন তিনি। কি করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘ আমি যৌন রোগের চিকিৎসক।’ পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে ওষধ তৈরি করছিলেন হামিম ইকবাল।

তিনি গ্যাস্ট্রিক, হজমের গোলযোগ ও যৌনশক্তি বাড়ানোর ওষুধ বানান বলে জানালেন। তিনি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ওষুধ তৈরির কাজ শিখেছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ‘ছোট বেলা থেকে ওষুধ বানাচ্ছি। তাই কোনটার সঙ্গে কোনটা মিশালে রোগ সারে,সেটা ভাল করে জানি।’

 

নগরীর কোতোয়ালী মোড় থেকে সিনেমা প্যালেস, চট্টগ্রাম আদালত, আন্দরকিল্লা, দেওয়ানহাট ও ষোলশহর পর্যন্ত এরকম অনেক পথচিকিৎসকের দেখা মিলবে রাস্তার দু’পাশে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের উদ্ভাবিত ওষধ,কেউ বা বেনামি কোম্পানীর মলম ও দাঁতের মাজন বিক্রি করেন। কেউ বা সর্বরোগে কার্যকর বিভিন্ন আংটি বা রিং বিক্রি করেন।

 

এসব ভুয়া চিকিৎসকরা নিজেরাই একেকজন সর্বরোগ বিশারদ, বিশেষজ্ঞ হিসেবে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। সামান্য পেটে ব্যথা থেকে শুরু করে মরণব্যাধি ক্যান্সারের চিকিৎসাও করাচ্ছে এসব ভুয়া চিকিৎসকরা। ভন্ড চিকিৎসকরা বাতব্যথা, আমাশয়, জন্ডিস, হাঁপানি, হাড় ভাঙা, প্যারালাইসিস, ক্যান্সার, জিন-ভূতের আছর, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, দাঁতের চিকিৎসা, বিভিন্ন ধরনের যৌন চিকিৎসাসহ সব ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যাগুলোর সেবা দিচ্ছেন এক বোতল পড়া পানি-তেল, একটি তাবিজ নতুবা বেনামি কোন বৃক্ষের মূল, বাকল দিয়ে তৈরি কথিত ভুয়া হারবাল ওষুধের মাধ্যমে।

 

চট্টগ্রামে আছে হারবাল নামধারী ভুয়া যৌন চিকিৎসকের ছড়াছড়ি। তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে যেমন নিঃস্ব হচ্ছেন তেমনি পঙ্গুত্ববরণসহ জীবন হারানোর মতো ঘটনাও ঘটছে। রাস্তাাঘাটে, ফুটপাত বাজারগুলোতে মাইকিং করে ঢাকঢোল বাজিয়ে আর রঙে ঢঙে গান পরিবেশনের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষগুলোর অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সেবার নাম করে স্বাস্থ্যসেবাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে এরা।

 

নগরীর হালিশহর, মুরাদপুর, চকবাজার, পতেঙ্গা,আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, খুলশী, বহদ্দরহাট, রাহাত্তারপুল, বাকলিয়া, বায়োজিদ বোস্তামী, হালিশহর, পতেঙ্গা, বন্দর, অক্সিজেন, পাঁচলাইশ, সল্টগোলা ক্রসিং, বন্দরের ফকিরহাট, অভয়মিত্র ঘাট, সদরঘাট, কদমতলী, দেওয়ানহাট, ষ্ট্যান্ড রোড়, চট্টগ্রাম রেল ষ্টেশন, অলংকার মোড়সহ বিভিন্ন অলিতে গলিতে চলছে পথচিকিৎসা।

 

নগর জুড়ে কার,মাইক্রো ও ভ্যান করে বিক্রি হচ্ছে পান্ডার মালিশ নামের ওষুধ। দাঁতের ব্যথা, ঘাড়ের ব্যাথা, ক্যান্সার, বাধ, ডায়েবেটিক, আলসার,যক্ষা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ বিক্রি করছে ভন্ড চিকিৎসকরা।

নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় মাইক্রো বাস করে বিক্রি করছেন কয়েকজন যুবক পান্ডার মালিশ। তাদের প্রশ্ন করা হলে জানান, ‘এ ওষুধে সর্বরোগে কার্যকর। তারা জানান, পথে তারা শুধু ওষুধ বিক্রি করে না। তাদের চেম্বারও আছে। ’

 

নগরীর জামালখান এলাকার বাসিন্দা শফিউল আলম জানান, রাস্তাঘাটে এসব পথচিকিৎসকের বিভিন্ন যৌন উত্তেজক কথাবার্তা অস্বস্তির জন্ম দেয়। পরিবার নিয়ে চলাফেরা করার সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষরা তাদের দ্বারস্থ হয়ে প্রতারিত হচ্ছেন।

 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. ইসমাইল হোসেন বলেন, পথচিকিৎসকদের ওষুধ ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। এসব ওষুধে জীবনও বিপন্ন হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর