chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আজ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। সৈয়দ হক তার বাবা-মায়ের আট সন্তানের জ্যেষ্ঠতম।

সৈয়দ হক তার বাবা মারা যাওয়ার পর অর্থকষ্টে পড়লে চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাটির পাহাড় চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখেন। পরে তোমার আমার, শীত বিকেল, কাঁচ কাটা হীরে, ক খ গ ঘ ঙ ও বড় ভালো লোক ছিলসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেন। ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ও ‘পুরস্কার’ নামে দুটি চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ত্যাগ করে লন্ডন চলে যান এবং সেখানে বিবিসির বাংলা খবর পাঠক হিসেবে চাকরি নেন। তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসর্মপণের খবরটি পাঠ করেছিলেন। পরে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিবিসি বাংলার প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার দৃঢ়কণ্ঠ সাবলীল উচ্চারণের জন্য তিনি জনসাধারণ্যে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৫৪ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘তাস’, ১৯৫৯ সালে প্রথম উপন্যাস ‘এক মহিলার ছবি’, ১৯৬১ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একদা এক রাজ্যে’ প্রকাশিত হয়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘নূরুলদীনের সারাজীবন’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘গণনায়ক’, ‘ঈর্ষা’। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পরানের গহিন ভিতর’, নাভিমূলে ভস্মধার’, ‘আমার শহর ঢাকা’, ‘বৃষ্টি ও জলের কবিতা’ প্রভৃতি। গান লিখেও খ্যাতি অর্জন করেছেন সৈয়দ হক। উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘তোরা দেখ দেখ দেখ রে চাহিয়া’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’।

কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সব শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য সৈয়দ শামসুল হককে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। তার লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছরব্যাপী বিস্তৃত। সৈয়দ শামসুল হক মাত্র ৩১ বছর বয়সে ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেছেন। এ ছাড়া বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক এবং ২০০০ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালের আজকের এই দিনে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক এই লেখক। তার জন্মশহর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের মূল ফটকের পাশে দাফন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর