chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সরকারি কর্মচারী জড়ালো বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

২১ লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের চালক মো.আব্দুল কালামের বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। অতিথি কর্মজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি ১৬৩ সাধারণ সদস্য ও ৬ উদ্যোক্তার ২১ লাখ ৮১ হাজার ৩১২ টাকা মেরে দেন। এ ব্যাপারে আদালতে সমবায়ের সভাপতি মামলা করলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে ধরা পড়ে আব্দুল কালামের জামিরজুরি ফাঁস হয়। তারপরও রেল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন মামলা করেননি।

 

অভিযুক্ত মোহাম্মদ আব্দুল কালাম চট্টগ্রাম সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদের গাড়ি চালক। তিনি সরকারি বেতনভুক্ত। তার বেতন স্কেল-২২ হাজার টাকা।

মানবাধিকার আইনজীবী ও চট্টগ্রাম আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া, সরকারি কাজ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না। অন্য কোনো চাকরি বা কাজ গ্রহণ করতে পারবেন না। যা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

 

অতিথি কর্মজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. অলি উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ২০১৭ সালের ১৪ মে ২০ উদ্যোক্তা মিলে অতিথি কর্মজীবী সমবায় সমিতি গঠন করি। যার নিবন্ধন নং-১২৭৩৩৪। এতে ৬ সদস্যের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে আরও ১৬৩ জনকে সাধারণ সদস্য হয়। তারা প্রায় ৩২ হাজার টাকা সমবায়ে জমা রাখেন। এছাড়া উদ্যোক্তাদের জমানোসহ মোট ২১ লাখ ৮১ হাজার ৩১২ টাকা সমবায়ে জমা ছিল।

অলি উদ্দিন হাওলাদারের অভিযোগ, ২০১৯ সালের দিকে পরিচালনা কমিটিতে থাকা সমিতির সম্পাদক আব্দুল কালাম, অর্থ সম্পাদক ফজলুল হক (কালু) ও সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্ল্যাহ মেরে দিয়ে আত্মগোপনে যান। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি আত্মসাতের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (২০১৩ সালের ১নং আইন দ্বারা সংশোধিত) এর ৮৩ (গ) (ঘ) ধারায় অভিযোগ এনে মামলা করি। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-কে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দেয়।

 

তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই উপ-পরিদর্শক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ সত্যতা পেয়ে ২০২০ সালের ১৩ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করি। তারা টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি সমিতির মূল্যবান মালামাল ও কাগজপত্র চুরি করে বিক্রি করে দেন।

 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর স্বাক্ষরিত একপত্রে দেখা যায়, যেসব সরকারি বেতনভুক্ত কর্মকর্তা–কর্মচারী ব্যবসায় জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদের গাড়ি চালক মোহাম্মদ আব্দুল কালাম বেশ কয়েকটি আর্থিক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। অতিথি কর্মজীবী সমবায় সমিতিতে তিনি ২০১৭ সালের মে থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠার পর সমবায়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অফিস চলাকালীন সময়ে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সময় দেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রেলের জেনারেল ম্যানেজার বরাবরে লিখিত অভিযোগ রয়েছে।

 

একাধিক আইনজীবী বলেছেন, সরকারি পদে থেকে বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার পরিপন্থী।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডাঃ ইবনে সফি আব্দুল আহাদ বলেন, গাড়ি চালক আব্দুল করিম বেসরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ বিষয়ে মামলা রয়েছে। মামলার রায় কি হয় দেখি,তারপর ব্যবস্থা নিব।

 

অভিযোগের বিষয়ে মো. আব্দুল কালাম বলেন, অতিথি কর্মজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। তবে আমার জানা ছিল না সরকারি স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থাকতে পারেনা।

এই বিভাগের আরও খবর