চোখ ওঠার লক্ষণ কী কী?
চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিসে অনেকেই এখন আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি ভাইরাসজনিত এক সংক্রমণের কারণে ঘটে। একে পিংক আইজ বা গোলাপি চোখও বলা হয়।
শুধু বড়দের মধ্যেই নয় নবজাতকসহ সব বয়সীদের মধ্যে কমবেশি এই সমস্যায় ভোগেন। কখনো ভাইরাল ফ্লুর কারণে, তো আবার কখনো অ্যালার্জি কিংবা চোখে ক্ষতিকর কোনো পদার্থ ঢোকার কারণেও এটি হতে পারে।
ক্ষেত্রে চোখে চুলকানি, চোখ দিয়ে পানি পড়া, ব্যথা, লালচে ভাব ও ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
চোখ ওঠা কী?
গোলাপি চোখ বা কনজাংটিভাইটিস হলো চোখের স্বচ্ছ ঝিল্লির (কনজাংটিভা) একটি প্রদাহ বা সংক্রমণ। এই ঝিল্লিই চোখের পাতার মাধ্যমে সাদা অংশকে ঢেকে রাখে।
যখন কনজাংটিভায় ছোট রক্তনালিগুলো ফুলে যায়, তখন সেগুলো আরও দৃশ্যমান হয়। এ কারণেই চোখের সাদা অংশ লাল বা গোলাপি দেখায়। গোলাপি চোখ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে দেখা দেয়।
চোখ ওঠার সমস্যা যন্ত্রণাদায়ক হয় ও এটি দৃষ্টিকেও প্রভাবিত করে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই গোলাপি চোখের কারণে কর্নিয়ায় প্রদাহের সৃষ্টি করে, যা দৃষ্টিকে প্রভাবিত করতে পারে।
চোখ ওঠার লক্ষণ কী কী?
- এক বা উভয় চোখে লালভাব
- চুলকানি
- আক্রান্ত চোখে তীক্ষ্ণ অনুভূতি
- চোখে সাদা/হলুদ/সবুজ স্রাব জমা
- চোখ ফুলে যাওয়া
- দেখতে সমস্যা হওয়া
- চোখে ব্যথা বা যন্ত্রণা
- আলোর প্রতি সংবেদনশীল
- চোখ দিয়ে বারবার পানি পড়া
- চোখে জ্বালাপোড়া
চোখ ওঠার কারণ কী কী?
- ভাইরাস
- ব্যাকটেরিয়া
- অ্যালার্জচোখে রাসায়নিকের প্রবেশ
- চোখে কোনো বস্তু ঢুকলে
ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়া কনজাংটিভাইটিস
পিংক আইজ বা কনজাংটিভাইটিসের অন্যতম কারণ হলো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এটি অ্যাডেনোভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, তবে হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস ও করোনাভাইরাসের কারণেও হতে পারে।
ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস উভয়ই সর্দি বা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণগুলোর সাথে প্রকাশ পায়। পরবর্তী সময়ে সংক্রমিত ব্যক্তির চোখ থেকে নিঃসৃত তরলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। এক বা উভয় চোখই এতে প্রভাবিত হতে পারে।
তবে চোখ ওঠার সমস্যা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চোখের অস্বস্তি কমাতে পারবেন। কারণ চোখ ওঠার সমস্যাটি সংক্রামক হতে পারে, প্রাথমিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত এর থেকে মিলবে সুস্থতা।
চোখ উঠলে কী করবেন?
যেহেতু এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই রোগীকে একটু সাবধানে থাকতে হবে। চোখ উঠলে বারবার চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আক্রান্ত চোখে যেন নোংরা পানি, ধুলাবালি, দূষিত বাতাস প্রবেশ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে। অনেকে চোখে উঠলে বারবার পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন কিংবা চোখে পানির ঝাপটা দেন। যা মোটেও ঠিক নয়।
যেহেতু চোখ উঠলে আলোতে যন্ত্রণা হয়, তাই বাইরে বের হলে সানগ্লাস পরুন। এই রোগে আক্রান্ত হলে নিজের ব্যবহৃত চশমা, রুমাল, তোয়ালে, কাপড়চোপড় সব আলাদা রাখা উচিত। রোগী চোখে হাত দিলে, হ্যান্ডশেকের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। তাই বারবার পরিষ্কার করে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
এছাড়া দৃষ্টি ঝাপসা হলে, চোখ মাত্রাতিরিক্ত লাল হলে, খুব বেশি চুলকালে বা অতিরিক্ত ফুলে গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- চোখে যদি প্রচুর হলুদ বা সবুজ স্রাব বের হলে
- চোখের পাতা খুলতে কষ্ট হলে বা একসসঙ্গে আটকে থাকলে
- আলোর দিকে তাকালে চোখে তীব্র ব্যথা হলে
- ঝাপসা দৃষ্টি
- জ্বর
- কাপুঁনি
- মুখের ব্যথা
- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া নবজাতকের চোখ উঠলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান, না হলে শিশুর দৃষ্টিকে স্থায়ীভাবে ক্ষতি করতে পারে।
যদি আপনার লক্ষণগুলো হালকা থাকে কিন্তু লালভাব ২ সপ্তাহের মধ্যে উন্নতি না হয়, সেক্ষেত্রেও চোখের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক/ওয়েবএমডি