chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পূর্বপরিকল্পিত অপপ্রচারে আমি ভীত নই -ডিসি মমিনুর

চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে মো. মমিনুর রহমান যোগদানের পর একের পর এক সফলতা অর্জনের মাধ্যমে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠছে । দুর্নীতি-অনিয়ম সরকারি জায়গা উদ্ধার ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্নসহ কাজে যথেষ্ট পরিমাণ সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। অতীতের সকল ডিসির রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন কঠোর ও ইতিবাচক প্রশাসনিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে। তার কাজের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বর্তমানে একটি মহল অপপ্রচার করছে বলে অভিমত বিশিষ্টজনদের।

সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান থেকে জঙ্গল সলিমপুরের সরকারি জায়গা উদ্ধার, স্বচছতার মধ্যে একের পর এক শূন্য পদে চাকুরি প্রদান,সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন, ১৬টি পৌরসভা নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ে কখনো কোনো দল বা প্রার্থী জেলা প্রশাসকের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা বা ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা অভিযোগ উত্থাপন করেননি।সম্প্রতি একটি দোয়া মোনাজাতের বিষয়কে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের।

জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, আমি ভয় পাওয়ার লোক না। আমার মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারবে না। আমি চট্টগ্রামের জন্য কি করি নাই। করে যাব। আমাকে কেউ থামাতে পারবেনা। ইচ্ছাকৃতভাবে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলকালীন খণ্ডিত, বিকৃত এবং অসত্য তথ্য সংবলিত সংবাদ কিছু মিডিয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। এ সংক্রান্ত একটি লিগ্যাল নোটিশ ইস্যু হওয়ার আগেই বা নোটিশ গ্রহীতারা নোটিশ পাবার আগেই কিছু মিডিয়ায় লিগ্যাল নোটিশ প্রদানের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় যে বিষয়টি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত একটি অপপ্রচার।

উল্লেখ যে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। বিভিন্ন প্রার্থীর অনেক কর্মী, সমর্থক, দলীয় নেতা এবং উৎসুক জনতায় পরিপূর্ণ ছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এমনকি বারান্দা থেকে নিচতলা পর্যন্ত ছিল উৎসুক জনতা। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ওই দিন সকাল ১০টা থেকে সম্প্রীতি সমাবেশ, আসন্ন দুর্গাপূজার প্রস্তুতিমূলক বিশেষ সভা, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের চেক বিতরণের কর্মসূচি ছিল। সম্প্রীতি সমাবেশের প্রস্তুতিমূলক সভা চলাকালীন জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীরা একযোগে সম্মেলন কক্ষে ঢোকেন এবং হুড়োহুড়ি করে জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।সভাস্থলে উপস্থিত অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানুষের ভিড়ের কারণে সভাকক্ষে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত, মিরসরাইতে রেলক্রসিং দুর্ঘটনায় নিহত ও গত ১৪ সেপ্টেম্বর জোরারগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪ জনের আত্মার মাগফেরাত কামনায় পূর্ব থেকেই দোয়া করার সিদ্ধান্ত ছিল। মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় ভিড়ের মধ্যে শ্রমিকলীগ নেতা সফর আলী আকস্মিকভাবে মোনাজাত ধরেন। বিক্ষিপ্তভাবে সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত অনেকেই মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাতে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো কিছু মোনাজাতে বলা হয়নি।

তারা বলেন, জেলা প্রশাসক দুর্গাপূজা এবং সম্প্রীতি সমাবেশের প্রস্তুতিমূলক সভায় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং কোনো ষড়যন্ত্র বা নাশকতাকারীদের দ্বারা যাতে আসন্ন দুর্গাপূজায় কোনোরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য সবার সহযোগিতা চান। কোনো স্বাধীনতাবিরোধী, উগ্রবাদী যাতে রাষ্ট্র ও সরকারকে বিব্রত না করতে পারে সে বিষয়ে সম্প্রীতি সভায় বক্তব্য দেন। কোনো দলের পক্ষে ভোট চাওয়া বা জেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো কোনো বক্তব্য তিনি দেননি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোনো দলের কোনো প্রার্থী বা সমর্থক কোনো আপত্তি বা অভিযোগও উত্থাপন করেননি।

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনের শত শত প্রার্থী, কর্মী, সমর্থকদের উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইকালেও কোনো প্রার্থী বা কর্মী সমর্থক কেউ রিটার্নিং কর্মকর্তার কোনো কার্যক্রমে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে এরূপ আপত্তি বা কথা বলেননি। এ সংক্রান্ত সিসিটিভি ফুটেজও সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের নানা জনকল্যাণমুখী কাজের কারণে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে চক্রটি পুনরায় সক্রিয় হয়ে পৃথক দুটি ঘটনাকে একত্রে নানা অপপ্রচার শুরু করে।

৩ জানুয়ারি ২০২১ সাল থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেন মো. মমিনুর রহমান। এরপর থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ১৩৬টি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছেন। এই অভিযানে ৫টি দুর্নীতির মামলায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ৩৯ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, অর্থদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে ৯৬ জনকে, চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ৭ জনকে, ৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, দণ্ডবিধির আওতায় মামলা করা হয়েছে ২টি, দুদক আইনে মামলা করা হয়েছে ৩টি, ১৯৩ জন দুর্নীতিবাজ ওমেদার ও অস্থায়ী কর্মচারীকে ভূমি অফিস থেকে বের করে দিয়ে তাদের তালিকা ভূমি অফিসগুলোতে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০৮টি সরকারি অফিস যথাক্রমে ভূমি অফিস, তহসিল অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে অত্যাধুনিক ৭১৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানা যায় সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

এই বিভাগের আরও খবর