chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধর খুনের রহস্য উৎঘাটন

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাতটি স্বর্ণের দোকান। প্রতিদিন সেসব স্বর্ণ দোকানের ব্যবসায়িক নগদ টাকা ও দামি স্বর্ণ ব্যাগে নিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে একেই পটিয়ার গ্রামের বাড়িতে ফিরতেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধর।

আর এ ধারণা থেকে স্বল্প সময়ে অনেক বড়লোক হয়ে যাওয়ার নেশা জন্মে পটিয়া উপজেলার জঙ্গল খাইন ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের লরিহরা গ্রামের মৃত ওবায়দুল হকের ছেলে রিক্সাচালক জিল্লুর রহমান (২৬) একই গ্রামের নুরুল আজগরের ছেলে রাজমিস্ত্রী আয়ুব আলীর।

তাদের এ কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এক এক করে তিনদিন তারা অপারেশন চালায়। দুদিন সড়কে লোকজনের চলাচল থাকায় তাদের মিশন ব্যর্থ হয়। তবে ৬ সেপ্টেম্বর তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হলেও স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে খুন করেও তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

চাঞ্চল্যকর পটিয়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে গলাকেটে নির্মমভাবে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার রাজমিস্ত্রী আইয়ুব আলীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমমূলক জবানবন্ধীতে খুনের রহস্য বেরিয়ে এসেছে।

গতকাল শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর হাকিম নাজমুন নাহার এর আদালতে আয়ুব আলীর স্বীকারোক্তিমমূলক জবানবন্ধীতে হত্যাকাণ্ডের পুরো রহস্য উদঘাটিত হয়।

এদিকে ঘটনাটি ক্লু লেস হওয়ায় বেশ বেগ পেতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে তারাও চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে শুরু থেকেই তৎপর ছিলেন।

এ হত্যাকাণ্ড তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে আইয়ুব আলীর অবস্থান শনাক্ত করে পুলিশ। শুক্রবার তার মামার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

তাছাড়া বিমান ধরকে গলাকেটে নির্মমভাবে খুনের ঘটনার ৯ দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে পটিয়া থেকেই সেই রিক্সাচালক জিল্লুর রহমানসহ আরো ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার অপরজন হলেন, ধলঘাট ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বনিক পাড়ার সোনা রাম ধরের ছেলে বাপ্পু ধর (২৮)। এ নিয়ে এ ঘটনায় গ্রেফতার তিনজনকেই খুনের সাথে জড়িত ধারণা করছেন পুলিশ।

এদিকে শনিবার আদালতে দেওয়া জবানবন্ধীতে আইয়ুব আলী জানায়, তারই প্রতিবেশী রিকশা চালক জিল্লুর রহমানের সাথে পরিকল্পনা করে অতি অল্প সময়ে কোটিপতি হতে চেয়েছিলেন। তারা টার্গেট করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে।

সেই লক্ষ্যে ৪ ও ৫ সেপ্টম্বর লড়িহরা নির্জন এলাকায় তারা ২ জন পাহাড়া দিয়ে আসছিল। ওই সময় রাস্তায় লোকজন থাকায় বিমানকে আটকানো সম্ভব হয়নি।

তবে ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টায় বিমান ধর মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ঘটনাস্থলে পৌছলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা দিয়ে বিমান ধরের মোটর সাইকেল গতিরোধ করে।

এসময় বিমান ধরের সাথে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। হত্যাকারীরা তার নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার খোঁজাখুজি করতে চাইলে বিমান ধর বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে জিল্লুর হাতে থাকা হাসুয়া (দা) দিয়ে আক্রমনের চেষ্টা করে।

তাতে অপারগ হলে আইয়ুব আলীর হাতে দা দিয়ে তার গলায় আঘাত করার জন্য বলে। আইয়ুব আলী বিমান ধরের গলায় দা বসিয়ে দিলে ঘটনাস্থলে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।

এক পর্যায়ে বিমান ধরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসতে দেখে আইয়ুব আলী বিমান ধরকে জবাই করে পার্শবর্তী জমির উপর দিয়ে ও রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।

পটিয়া থানার পরিদর্শক ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানান, বিমান ধরের খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই রিমান ধর বাদি হয়ে অজ্ঞাত নামাদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা করেন।

আমরা এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক টিম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে রিমান্ডে আনা হয়েছে। একজনের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখন অনেকটাই পরিস্কার। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো হত্যাকাণ্ডের জট খুলে যাবে।

থানা সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া থানার ওসি তদন্ত রাশেদুল ইসলাম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সঞ্জয় ঘোষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর রিকশা চালক জিল্লুর রহমান ও গৈড়লা এলাকার বাপ্পু ধরকে গ্রেফতার করে। পরদিন শুক্রবার আইয়ুব আলীকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকারীরা পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের বিবরণ দিলে তাদের জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করা হয়।

পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান জানান, এ হত্যাকান্ডের মোটিভ উদ্ধারে পুলিশবাহিনীর সদস্যরা নিরলস কাজ করেছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিমান ধরের হত্যাকান্ডে জড়িতদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করব। তবে তিনি এ আসামীদের গ্রেপ্তারের পেছনের রহস্য তুলে না ধরলেও তাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের মোটিভ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর