chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অফুরান্ত সম্ভাবনার বাকলিয়া’র দু:খ গাঁথা

সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধি:ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক অনবদ্য স্থান। কর্ণফুলী বেষ্টিত জনপদটি প্রকৃতির লীলা নিকেতন বলা চলে। কিন্তু বাকলিয়াবাসীর দু:খ-এই এলাকাকে দারুণ অবহেলা করা হচ্ছে। বাকলিয়ার আছে অফুরন্ত সম্ভাবণা। কিন্তু সেই সম্পদ ও সম্ভবনাকে মোটেই কাজে লাগানো হচ্ছে না। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে পুরো এলাকা বর্ষা কি শীতে বছরের প্রায় সময় ডুবছে পানিতে। জলবদ্ধতায় মগ্ন থাকে দেশের অন্যতম পাইকারি বাণিজ্যিক এলাকা খাতুনগঞ্জ,আসাদগঞ্জ এবং চাক্তাইসহ পুরো বাকলিয়া। বাকলিয়ার ইদানিং প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা ও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ।

স্থানীয় অধিবাসীদের ভাষায় ‘বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। বর্ষা জুড়েই থাকে জলাবদ্ধতা। শীত-গ্রীষ্মে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে ভরে থাকে। মাদক ব্যবসা, অপ্রতুল রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা সমস্যা ঘেরা বাকলিয়া চট্টগ্রাম মহানগরীর আর ১৫টি থানার সাথে তুলনা করলে খুবই বেমানান। কিন্তু নগরীর অন্যান্য থানা চেয়ে বাকলিয়ার সম্পদ ও ঐতিহ্যের কি নেই।

অভিযোগ উঠেছে-বাকলিয়ার উন্নয়নের দিকে কোন চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের চোখ নেই। চট্টগ্রাম নগরীর স্বার্থেই বাকলিয়ার যে উন্নয়ন হওয়া প্রয়োজন ছিল,সেটা হয়নি আজো। চট্টগ্রাম নগরীর সিংহভাগ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাকলিয়ায় অবস্থিত। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ,আসাদগঞ্জে রয়েছে ১৩০০ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রতিদিন পাঁচশ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। বাকলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা রয়েছে প্রায় শতাধিক এবং দেশের আসবাবপত্রের বৃহত্তম বাজার বলিরহাট বাকলিয়ায় অবস্থিত। এসব মিল কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার বছরে কয়েক শত কোটি টাকা আয় করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখন গড়ে তোলা হয়নি বাকলিয়ায়। রয়েছে গ্যাস বিদ্যুতের হাহাকার। ওয়াসার পানির লাইন যায়নি অনেক এলাকায়। গ্যাস নেই,পানি নেই-বিদ্যুৎ নেই-অনাকাঙ্খিত এই তিন সত্যতে হজম করতে গিয়ে বাকলিয়ার ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প কারখানার উৎপাদন লাটে ওঠার উপক্রম।

জলবদ্ধতায় কুকঁড়ে খাচ্ছে বাকলিয়াবাসীকে। মাত্র ৫০ মিলিমিটার বা দু’ ইঞ্চি বৃষ্টিতে পুরো বাকলিয়া এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে মেঘ দেখলেই সবার মনে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কর্ণফুলী নদী,রাজাখালী খাল এবং চাক্তাইখাল বেষ্টিত চাক্তাই,খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জে প্রায় সময় জোয়ারের পানি ঢুকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে প্রায় সময়। একবার জোয়ারের পানি ঢুকলে অন্তত ৩ ঘন্টা জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে ক্ষতি হয় শত কোটি টাকার উপরে। ব্যবসার জন্য এক সময়কার চমৎকার এলাকাটি এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে

বিশেষজ্ঞজনরা মনে করছেন, কর্ণফুলী নদীর ওপর পিলার বসিয়ে সেতু নির্মাণ এবং অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করায় সেতু সংলগ্ন চাক্তাই খালের মুখে নদী প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। তাই জোয়ারের শুরুতেই পানি চাক্তাই ও রাজাখালী খাল হয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জে ঢুকে পড়ে। ২০০০ সালের পর থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্যে ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা দাবি দিয়ে আসছে। নতুন খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বাকলিয়াসহ নগরবাসী।

শত বছর আগে থেকেই চাক্তাই খাল ঘিরে গড়ে উঠেছে শত শত মিল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দখল-দূষণে চাক্তাই খাল সরু হয়ে পণ্যবাহী নৌ-চলাচল ব্যাহত হয়ে মরতে বসেছে খালটি। সাথে কমে এসেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে জৌলুস। ছোট ছোট ঘিঞ্জি পরিবেশ আর অপরিকল্পিত ভবনে ছেয়ে আছে পুরো এলাকা। যানজটে থমকে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও নগরবাসীর জীবন যাত্রা। ঘনবসতি পূর্ণ বাকলিয়ার আরেক সমস্যা ঘিঞ্জি পথের কারণে যানজট। ঘিঞ্জি পথের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় এবং আগুন লাগার পর একই কারণে বস্তি থেকে বের হতে না পেরে ২০০৯ সালে বউ বাজারে আগুনে পুড়ে মারা যায় ২৩ জন। ওই এলাকায় হেঁটে গেলে দশ মিনিট আর গাড়িতে চড়ে ১ ঘন্টায় পথ পুরায়। বাকলিয়া থানা এলাকার প্রায় চিত্র এরকম। ঘিঞ্জি পথে দুর্বিসহ যানজটে নাকাল থাকে এলাকাবাসী। এখানবার বেশির ভাগ সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগে থাকে। এলাকায় এতবেশি সমস্যার কারণে দায়িত্ব নিয়েও হতাশায় ভোগেন জন প্রতিনিধিরা।

বাকলিয়ার নাগরিক জীবনের সম্প্রসারণ কতটা হয়েছে সন্ধ্যায় নগরীতে বের হলে বুঝা যায় নাগরিক জীবনে নেমে আসে এক ধরণের নিস্তব্দতা, জীবন থমকে যায়। নাগরিক জীবনের উচ্ছলতা নেই। অথচ কী নেই বাকলিয়ায়। সম্পদ,সম্ভাবনা সবই আছে।
বাকলিয়াবাসীর দাবি,এ জনপদকে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়িত করতে জলাবদ্ধতা নিরসন, নতুন খাল খনন, রাস্তাঘাট প্রশস্ত করণ, সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী এলাকাটিকে গড়ে তুলতে হবে।