জন্মনিবন্ধন ফি বেশি রাখার অভিযোগ চসিক কাউন্সিল কার্যালয়ের
সরকারি নিয়মানুযায়ী জন্মনিবন্ধনের জন্য শিশুর জন্ম থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত বয়সের শিশুদের কোনো ফি নেওয়া হয় না। ৫ বছর বয়সী শিশুদের ২৫ টাকা ও ৫ বছরের ওপরে সবার জন্যে ৫০ টাকা ফি নেওয়ার নিয়ম করে দিয়েছে সরকার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার ওয়ার্ড কার্যালয়গুলোতে সরকারী এ নিয়ম মানছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা এমনটাই অভিযোগ করছেন ভুক্তোভুগী অনেকেই। জন্মনিবন্ধন করতে আসা ব্যক্তিদের রয়েছে নানা ধরণের অভিযোগ। অনেকেই ভয়ে কিছু প্রকাশ করতে চাইছে না সহজেই।
আজ বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে চাওয়া হচ্ছে লুকিয়ে।
এছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নাম লিখতে গিয়ে ডিজিটাল সেন্টারের কর্মচারীরা হরহামেশা ভুল করলে পরবর্তীতে তার জন্যে নিবন্ধন করতে আসা ব্যক্তিদের নতুন করে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।
সূত্রে জানা যায়, নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দারা। জন্ম সনদের জন্য সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে ডিজিটাল সেন্টারে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়। একে তো অতিরিক্ত ফি অন্যদিকে নিবন্ধনের আবেদন করতে গিয়ে বানানে ভুল করে থাকলে তার দায় চাপিয়ে দেয়া হয় সেবা প্রার্থীদের ওপর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থী চট্টলার খবরকে বলেন, ‘ডিজিটাল সেন্টারে বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধনের জন্যে আবেদন করতে গেলে তারা আবেদন করে দেয় পরবর্তী সময়ে গিয়ে দেখতে পাই তারা নামের বানানে ভুল করেছে। এ জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে তারা। এখন ভুল সংশোধন করে পুনরায় নিতে গেলে আবারও কত টাকা দিতে হবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। গত ৩দিন ধরে এক জন্মনিবন্ধন করতে কতো ভোগান্তি পোহাতে হলো তার কোনো শেষ নাই।’
এ বিষয়ে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনুর সাথে কথা হলে তিনি চট্টলার খবরকে বলেন,‘আমরা প্রতিদিনই ব্রিফিং করছি, ওয়ার্ড অফিস থেকে জন্ম নিবন্ধনের জন্যে কোনো প্রকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করার। সেবা প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বারবার জানানো হয়েছে আপনারা সরকার নির্ধারিত ফি’র বেশি প্রদান করবেন না। কেউ যদি অতিরিক্ত ফি চেয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি আমার কাছে সরাসরি জানানো হলে আমি এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কিন্তু কেউ যদি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে থাকে এত আমাদের কিছু করার নেই।’
৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, এখানকার ডিজিটাল সেন্টারে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন। ধীর গতিতে চলতে থাকে নিবন্ধন কার্যক্রম। কেউ কেউ জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্যে এলে অপেক্ষা করতে বলা হয়। লাইন শেষ হয়ে গেলেও যেনো সংশোধনের সুযোগ পাওয়া হয় না। কখনো কখনো স্থানীয়রা নিবন্ধন করতে এলে নিবন্ধনে তাদের অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে উল্লেখ করার অভিযোগও পাওয়া যায়।
উত্তর পাহাড়তলী ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইব্রাহিম চট্টলার খবরকে জানান,তার ৩ বছর বয়সি শিশুর জন্ম নিবন্ধন করাতে ৩ সপ্তাহ আগে আসেন তিনি তার থেকে ১০০ টাকা চাওয়া হয়। ফরম ফিলাপ করে জমা দেওয়ার পর নামে ভুল করে চাওয়া হয় আরো ১৫০ টাকা। সপ্তাহ খানেক ঘুরানোর পর নাম সংশোধন করতে পারেন বলে জানান।
সেলিম নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান,আমার ছেলের বয়স ৮ বছর, জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করাতে আসি কাগজ পত্র ঠিক থাকার পর আমাকে এক কর্মকতা স্পিড মানি দিতে বলে। না হয় ৩ সপ্তাহ পর আসতে বলেন। অল্পটাকা হওয়ায় দিয়ে দিয়েছি।
এভাবেই চলছে হরহামেশাই কাউন্সিলরকে ফাঁকি দিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠছে নগরীর সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর কার্যালয়ের কর্মচারিদের পকেট। সেবা ভোগান্তি কমাতে নগরীর কাউন্সিলর কার্যালয় গুলোতে নজরদারি বাড়াতে পরামর্শ নগর চিন্তাবিদদের।