chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রাম নগরে ড্যান্ডি নেশায় বুঁদ দেড় হাজার পথশিশু

সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধি: মরণঘাতি হচ্ছে চট্টগ্রামের পথশিশুরা। বর্তমানে নগরের প্রায় দেড় হাজার পথশিশু ড্যান্ডি নামক এক ধরণের নেশায় বুঁদ থাকে শিশুরা। প্রশাসনও তাদের এ নেশা বন্ধের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে খুব সহসা নেশাটি পথশিশুদের পাশাপাশি সমাজের অন্যসব শিশুদের মধ্যে বিস্তার করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম রেল স্টেশন এলাকায় একদল পথ শিশু বসে ঝিমাচ্ছে আর পলিথিন দিয়ে কি যেন করছে। নাম জিজ্ঞেস করতে একে একে বলে উঠল, কাউসার, বিল্লাল, তাজু, আজমল, মনির, সেলিম, কবির। তোমরা এখানে কি করছো? প্রশ্ন শেষ না হতেই একজন চোখ বোঝে জড়ানো গলায় বলে উঠল, ড্যান্ডি বানাইয়া খাই, বুজছেন এবার ? আর একজন বলে উঠল, বুঝে নাই মনে হয় । তাহলে আপনারে কই’ এ বলে দলের একজন দেখাতে শুরু করল ড্যান্ডি তৈরীর কায়দা কানুন।

ড্যান্ডি সেবীরা জানান, জুতা জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহ্নত বিশেষভাবে তৈরী আইকা গাম ড্যান্ডি তৈরীর প্রধান উপকরণ। কোটা থেকে সামান্য আইকা গাম নিয়ে ছোট পলিথিন ব্যাগের ভিতরে লেপ্টে দেয়ার পর পলিথিনে ফু দিয়ে ফুলিয়ে এর ভিতরে নাক মুখ ঢুকিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিলে মাথায় ধরে নেশা হয়।

নগরের কোতোয়ালি থানাধীন  আমতল এলাকায় ড্যান্ডি নেশা করতে দেখা যায় বাচ্চু, মুছা, প্রীতম ও সেলিম। তাদের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।

১১ বছর পথশিশু সেলিম জানায়, এ নেশার খরচ কম, ড্যান্ডি খেলে ক্ষুধা লাগেনা, মনে কোন দুঃখ থাকেনা। ছোট বেলা থেইক্যা বাপরে দেহি নাই, কয় দিন হল মা আরেক জনের লগে বিয়া বইছে। নতুন বাপের লগে আমার বনেনা। এহন ষোলশহর রেল ষ্টেশনে থাকি।

আরেক পথশিশু বাচ্চু বলেন, কদমতলী রেল স্টেশনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বস্তি ও নির্জনস্থানে মদ ফেনসিডিল, গাজা, হেরোইন, এসব পাচার করে যে টাকা পায় তা দিয়ে খাবার খায় আর ড্যান্ডি কিনে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকি।

একদিন খাবার না খেলে তাদের চলে, ড্যান্ডি না খেলে চলেনা। ঘুম হয়না, কিন্তু পেট জ্বলে। পরিণত নেশাগ্রস্থদের মত আধশোয়া অবস্থায় ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কাথাগুলো বলছিল, আনুমানিক ১২-১৩ বছরের শিশু আলম মোস্তফা।  চট্টগ্রাম শহরের এখন অনেক পথশিশু এখন ড্যান্ডি নেশায় বুঁদ থাকে। তারা নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রোর উপ পরিচালক সুমন মন্ডল চট্টলার খবরকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও সংশোধন আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু । সেই ধারা থেকে আমরা পথ শিশুদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম নই। তবে চট্টগ্রামে রাজধানীর মতো মাদকাসক্ত নারী ও শিশু সংশোধানাগার থাকলে পথশিশুদের কিছু সংখ্যক হলেও আমরা এর আওতায় এনে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারতাম।

পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য অধিকার ভিত্তিক সেবা প্রদানকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ‘অপরাজয়ের বাংলাদেশের’ হিসেব মতে বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগে পথ শিশুর সংখ্যা ৫৫ হাজার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, কোতোয়ালী, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, ষোলশহর, কদমতলী, নতুনব্রিজ, পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। এসব অধিকাংশ শিশুই সামান্য অর্থের বিনিময়ে মাদক কারবারে জড়িত রয়েছে। নিজেরাই হয়ে পড়েছে মাদকাসক্ত।

বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক প্রধান মোহাম্মদ মোস্তফা রহমান এ ব্যাপারে বলেন, পথ শিশুদের ড্যান্ডি নেশার কবল হতে রক্ষা করতে আমাদের “ চাইন্ড টু চাইন্ড কনটার্ক” কার্যক্রম আরো জোরদার করছি। নগরীতে পথ শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ড্যান্ডি সেবনকারীর সংখ্যাও। মাদকব্যবসায়ীরা যাতে পথশিশুদের ব্যবহার করতে না পারে সে লক্ষ্যে আমরা পুলিশের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।

 

এই বিভাগের আরও খবর