chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

দূর্গম পাহাড়ে ‘সহজ সরল’ জাকেরুল্লাহ অস্ত্রের কারখানা !

সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ,বিশেষ প্রতিনিধি: এলাকায় ‘সহজ সরল’ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত জাকেরুল্লাহ (৫০)। পেশায় কাঠ মিস্ত্রী। মাঝে মধ্যে তিনি হাল-চাষও করেন। এলাকায় এর বাইরে তাঁর আর কি পেশা কেউ জানত না। শান্ত স্বভাবের এ জাকেরুল্লাহ প্রশাসনের অশান্তির কারণ ছিল।

বাঁশখালীর দুর্গম জঙ্গল চাম্বল এলাকায় অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা করে দীর্ঘদিন ধরে তিনি সরবরাহ করতেন জলদস্যু ও ডাকাতদের কাছে। অস্ত্র তৈরির এ কারিগর মাত্র ৫দিনের মধ্যে তৈরি করতে পারতেন ওয়ান শুটারগান ও টু-টু বুরের পিস্তল।

তবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৭ এর গোয়েন্দা নজরদারির জালে অবশেষে তাঁকে ধরা পড়তে হলো। র‌্যাব-৭ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ আজ বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জাকেরুল্লাহকে আটকের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, জাকেরুল্লাহর কাছ থেকে ৮টি ওয়ান শুটারগান, ২টি টু-টু পিস্তল, অস্ত্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য রাখা গ্রাইন্ডার, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি, রড কাটার, বাটালসহ যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।

আটক জাকেরুল্লাহ (৫০) বাশঁখালী উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গল চাম্বল এলাকার নুরুল হুদার সন্তান। র‌্যাব বলছে, অভিযানের সময় তাঁর দুই সহযোগী পালিয়ে যায়। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, আটক জাকেরুল্লাহ ৭-৮ বছর ধরে অস্ত্র তৈরিতে জড়িত। আধুনিক প্রযুক্তি মাথায় রেখে সে অস্ত্র তৈরি করে। উদ্ধার হওয়া প্রতিটি অস্ত্রই সচল। মাদক কারবারে, জলদস্যুতা এবং ডাকাতির কাজে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো তৈরিতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হয়। দালালের কাছে একেকটি অস্ত্র ৭-৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। দালালরা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, আটক জাকেরুল্লাহ এক সময় কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে মধ্যে তিনি কৃষিকাজও করেন। আমাদের কাছে তথ্য ছিল জাকেরুল্লাহর অস্ত্র তৈরির কারখানার বিষয়ে। তবে তাঁর অস্ত্র কারখানাটি দূর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং অপরিচিত কাউকে দেখলেই অস্ত্র তৈরির সঙ্গে জড়িতরা সর্তক হয়ে যেত ফলে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন ছিল। তবে গোয়েন্দা নজরদারি এবং বিশেষ কৌশলে পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশ করায় এই চক্রের সদস্যরা টের পাননি।

র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, জাকিরসহ আরও তিন কারিগর মিলে অস্ত্র তৈরির সম্পূর্ণ কাজটি করতো। অস্ত্রের প্রকারভেদে তৈরী করতে তাদের ন্যূনতম পাঁচ থেকে পনেরো দিন সময় লাগে এবং অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে এসে এই কারখানায় প্রস্তুত করতো তারা। কারখানার অনেক দূর থেকে একটি বাড়ি থেকে বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ে তাঁরা কাজ করতো।

ইহ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর