chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মিরসরাই ট্রেন দূর্ঘটনায় ৬সুপারিশ তদন্ত কমিটির

ডেস্ক নিউজঃ ঢাকা-চট্টগ্রাম মিরসরাইয়ে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষের ঘটনার তদন্তে আগামীতে আধুনিকায়নের প্রতি মনোযোগী হতে বলা হয়ে এই ধরণের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে লেভেল ক্রসিং গেইটের অব্যবস্থাপনা দূর করতে ৬ টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

জানা যায়, গেটম্যান ও মাইক্রোবাস চালককে সমান ভাবে দায়ী করে ট্রেনের সাথে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

কমিটির দেয়া ৬টি সুপারিশই লেভেল ক্রসিং (এলসি) গেইট সংক্রান্ত।

দেশজুড়ে অধিকাংশ লেভেল ক্রসিং গেইটই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যমান এলসি গেটের অর্ধেক প্রায়ই অবৈধ । পর্যাপ্ত জনবল নেই বৈধ এলসি গেট গুলোতে ।

রেলপথের চারপাশে চলাচলের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিধিনিষেধ থাকলেও সেগুলোর নিয়ম অনুযায়ী পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই সারাদেশে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।

প্রতিবেদনে ৬টি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, বেরিয়ার ফেলানোর পর সাধারণ মানুষ যাতে গেট বেরিয়ার উঠাতে না পারে সেজন্য প্রত্যেকটি গেট লকিং রাখতে হবে, সকল এলসি গেইটে ট্রেন আসা যাওয়ার তথ্য প্রদানের জন্য টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা করা যেতে পারে, সকল এলসি গেইটের উন্নত প্রযুক্তির প্রবর্তন, সকল এলসি গেইটে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন, সকল এলসি গেইটে বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা এবং রেলওয়ের জিএন্ডএস রুলের (আবশ্যিক নির্দেশনা) ২৩৩/খ এর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

রেলওয়ের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এলসি গেইটগুলোর সিংহভাগই টেলিফোন সংযোগ নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, এলসি গেইট বেরিয়ার লক করার ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে দূর্ঘটনা ঝুঁকি বেড়ে গেলেও সিসি ক্যামেরা ছাড়াও ডিজিটাল ইন্টারলকিং পদ্ধতির ব্যবহার নেই। অপর দিকে রেলওয়ের আইন অনুযায়ী গেইটম্যান এলসি গেট পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব আবশ্যিক নিয়ম প্রতিপালন করার কথা সেগুলোও যথাযথ ভাবে মেনে চলা হয় না।

উল্লেখ্য ২৯ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী আন্ত:নগর মহানগর প্রভাতী ট্রেন মিরসরাই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় রেললাইনের উপর থাকা একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। ওই ঘটনায় ট্রেনটি মাইক্রোবাসকে অন্তত এক কিলোমিটার নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান ১১ জন ও পরে দুই জনের মৃত্যু হয়। আহতরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এরপর ১৪ আগস্ট তদন্ত কমিটি তাদের কাজ সম্পন্ন করে জানান, প্রতিবেদনে বেরিয়ার ফেললেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার জন্য গেটম্যানকে শাস্তির আওতায় আনার কথা উল্লেখ করা হয়।

আরও উল্লেখ করা হয়, ট্রেন যাওয়ার আগে গেটম্যান দুই পাশের ব্যারিয়ার ফেলে রেখেছিল। কিন্তু কেউ একটি ব্যারিয়ার উঠিয়ে ফেললে মাইক্রোবাস ক্রসিং পার হয়ে যায়। অপর প্রান্তের ব্যারিয়ার নামানো থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে রেল ক্রসিং পার হতে পারেনি। গেটম্যানের অতীতে কাজে ফাঁকি দেয়ার কোন অভিযোগ নেই ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভিউ ক্লিয়ারেন্স অনুযায়ী অন্তত ৬০০ থেকে ৮০০ মিটার দূরবর্তী স্থান থেকে রেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় একটি ট্রেনকে দেখতে পাওয়া যায় ।

জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজারের পূর্ব খন্দকিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতরা। নিহত ১৩ জনের মধ্যে গাড়িচালক ছাড়া অন্যরা স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার দিন সকালে তাঁরা মাইক্রোবাসে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে যান। দুপুরে সেখান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তাঁরা। দুর্ঘটনার পরপর গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এ ঘটনায় চার ও পাঁচ সদস্যের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মিরসরাইয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে সংঘটিত দুর্ঘটনার বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে এলসি গেইট রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এলসি গেইটের সমস্যা ও সংকট দূর করে আধুনিক এলসি গেইট ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করছে বলে জানান তিনি।

ইহ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর