chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে ৮৮ পাহাড় বিলুপ্ত, ৯৫ পাহাড়ের গায়ে কোপ

সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ,বিশেষ প্রতিনিধি: পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রাম নগরে দিনদিন বিলুপ্ত হতে চলছে পাহাড়। গত ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগরের ২০০ পাহাড়ের মধ্যে ৮৮টি পাহাড় নিচিহ্ন হয়েছে। ৯৫টি পাহাড় আংশিক কেটে ফেলেছে পাহাড় খোকোরা।

বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝরনা, ষোলশহর এবং ফয়েজ লেক।

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের উপদেষ্টা প্রফেসর ড.মঞ্জরুল কিবরিয়া বলেন, পাহাড় নিচিহ্ন হওয়া উদ্ভেগের কারণ। এভাবে নগরে পাহাড় নিধন করা হলে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিটের সাবেক অধ্যাপক এস এম সিরাজুল হক একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে ‘হিল কাটিং ইন অ্যান্ড অ্যারাউন্ড চিটাগং সিটি’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে এসেছে পাহাড় নিধনের ভয়াবহ চিত্র।

১৯৭৬ সালে নগরের ৫ থানা এলাকায় মোট পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার । ২০০৮ সালে তা কমে হয় ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার । এ সময়ে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কাটা হয় এটা মোট পাহড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ । নগরের বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালি ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় এসব পাহাড় কাটা হয় । সবচেয়ে বেশি ৭৪ শতাংশ কাটা পড়ে পাচলাইশে।

গত ৩০ মে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা আয়োজিত সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ মেসবাহুজ্জামান গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয় গত চার দশকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১২০টির মতো পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে। ৪০ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০০ পাহাড় ছিল। যাব ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম পাহাড় রক্ষা কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চুয়েট ভিসি (প্রাক্তন) প্রফেসর মোজাম্মেল হক বলেছেন, পাহাড় ধ্বসে মানুষ মরলে প্রশাসন ইঞ্জিনিয়ারিং খোজে দ্রুত লাশ উদ্ধার করার জন্য। পাহাড় ধ্বস প্রতিরোধ ও পাহাড় রক্ষায় যথা সময়ে যথাযথভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রয়োগ করা হলে পাহাড় রক্ষা হবে তা ধ্বসে মানুষও মরবে না। চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় প্রয়োজন প্রশাসনিক সৎ ইচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা।

তিনি বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক যে সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন তা সঠিত পরিকল্পনার মাধ্যমে নিবিড়ভাবে বাস্তবায়িত হলে নগরী এবং জেলার অবশিষ্ট পাহাড় রক্ষা করা যাবে।

তিনি আরো জানান, ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচটি থানা এলাকায় ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পাহাড় ছিল। পরবর্তীকালে ৩২ বছরে মোট পাহাড়ের ৫৭ শতাংশ হিসেবে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কেটে ফেলা হয়। এসময়ে নগরীর বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালি এবং পাহাড়তলী এলাকায় ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি পাহাড় আংশিক কাটা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম ও চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরী ও সীতাকুণ্ডের মধ্যস্থলে জঙ্গল সলিমপুর ও আলী নগরে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে ভূমিদস্যুরা প্লট বাণিজ্য করছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত আসামিদের জড়ো করে সন্ত্রাসী জনপদ বানানো হয়েছে। অবশেষে প্রশাসন এসব পাহাড় কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে জঙ্গল সলিমপুর এবং আলীনগরে ২০০০ সাল থেকে গত ২২ বছরে অর্ধ শতাধিক পাহাড় সংঘবন্ধভাবে নিধন করা হয়েছে। এখানে সরকারের খাস খতিয়ান ভুক্ত পাহাড় ছিল ৩ হাজার ১শত একর। কিন্তু গত ২ যুগের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০জনের চিহ্নিত ভূমিদস্যু বাহিনী চট্টগ্রামের এই জঙ্গল সলিমপুর এবং আলিনগর এলাকার পাহাড় কেটে আলাদা এক সাম্রাজ্য তৈরি করেছে ।

গত ২ আগস্ট মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এবং পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ ১৭৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৭০০ একর পাহাড়ি জমি উদ্ধার করা হয়।

জঙ্গল সলিমপুরে যেটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে সেটুকুতেই সরকারের মহাপরিকল্পনা হিসাবে জেলা কারাগার, ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর