chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

প্রখর রোদে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরীর একাংশ

সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ,বিশেষ প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া,পাঠানটুলী,পতেঙ্গা থানা এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ। বঙ্গোপসাগরের পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় এবং সংশ্লিষ্ট খালের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ না করায় এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ,বেড়িবাধ ও স্লুইসগেইট নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন সময়মতো উদ্যোগ না নেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া ও পতেঙ্গা এলাকার বেশিভাগ জায়গা সাগরের জোয়ারের পানিতে প্রায় সময় ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। এলাকাবাসীর দৈনন্দিন কাজের পরিকল্পনা করেন জোয়ার-ভাটার সময় দেখে। প্রখর রোদেও পায়ের নিচে এক হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। শুষ্ক মৌসুমে অথবা বর্ষাকালে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কোনো দেখা না থাকলেও এসব এলাকা ডুবে থাকে হাঁটুপানিতে। ঘর থেকে বের হওয়া বা ঘরে ফেরার সময়সূচি নতুবা কোনো অতিথির বেড়াতে আসার সময়ও নির্ধারণ করা হয় জোয়ার-ভাটার সময় দেখে। জোয়ারের পানির আতঙ্কে থাকেন এলাকাবাসী। এলাকার একাধিক ব্যক্তি জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন,‘তা না হলে নগরবাসীর জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়বে।’

আজ আগ্রাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, ব্যাংক কলোনি, বেপারিপাড়া,আবেদিন পাড়া, ছোটপুল, বলির পাড়া, সিজিএস কলোনীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে। এলাকাবাসীরা জানায়, প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকে পুরো এলাকা। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে এলাকার লোকজন জরুরি কাজে ছোটাছুটি করেন। এলাকার নালা উপচে জোয়ারের পানিতে রাস্তা ডুবে যায়। বেশির ভাগ ভবনের নিচতলা তলিয়ে যায়। এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান।

প্রখর রোদেও হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরীর একাংশ

বছরের তিন-চার মাস একটানা জোয়ারের পানিতে এলাকা ডুবে থাকায় তাদের উৎপাদন এবং পণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়ে। কড়া রোদের মধ্যেও প্রায় হাঁটুপানি পার হতে হয় এলাকাবাসীকে। বিভিন্ন বাসাবাড়ি, হোটেল ও দোকানে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। এসব এলাকার স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের হাঁটুপানি ডিঙিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি স্কুলসহ এসব এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা এক হাতে পায়ের জুতা আরেক হাতে বই-খাতা নিয়ে চলাচল করে। নোংরা পানিতে জামা-কাপড় ভিজে যায়। আর যারা রিকশায় চড়ে তাদের গুনতে হয় ৩ গুণ বেশি ভাড়া। ২০ টাকার রিকশা ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা।

খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক জলাবদ্ধতা
বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণের কর্ণফুলীর তীরে খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চাক্তাই, কোম্পানিগঞ্জ, টেরিবাজার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সহ প্রয়োজনীয় সকল কিছু পাওয়া যায় এ বাজারে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের শিল্প-বাণিজ্য শুরু এখন থেকে। এখানকার বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রী দেশের সকল স্থানের সরবরাহ করা হয়। দেশের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক-বীমা এখানে শাখা আছে। এসব ব্যাংকগুলো প্রতি কার্যদিবসে হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। অথচ সময়ের প্রয়োজনের এ পাইকারী বাজারের কোনো ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। ফলে আমবশ্যার সময় জোয়ারের পানি ডুকে পুরো এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

প্রখর রোদেও হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরীর একাংশ

এখনকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আজ জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে মধ্যম চাক্তাই, নতুন চাক্তাই, চর চাক্তাই, পুরাতন চাক্তাই, মকবুল সওদাগর রোড ও আসাদগঞ্জের প্রতিটি সড়ক। এছাড়া খাতুনগঞ্জ সড়কের পাশে হামিদুল্লাহ মার্কেটে পানি উঠেছে। পাশাপাশি চান্দমিয়া গলি, ইলিয়াছ মার্কেট, বাদশা মার্কেট, সোনা মিয়া মার্কেট, নবী মার্কেট, মাল্লা মার্কেট, চাক্তাই মসজিদ গলি, ড্রাম পট্টি, চাল পট্টি ও এজাজ মার্কেটসহ বেশির ভাগ মার্কেটেই পানি ঢুকে পড়ে। চাক্তাই এলাকার চাল পট্টিতে কয়েকশ চালের দোকানে পানি উঠে প্রচুর চাল নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চাল বিক্রেতারা। তারা আরো বলেন, জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ দোকান ও আড়তে পানি ঢুকে পড়ে। এজন্য তারা চাক্তাই-রাজাখালী খালসহ গুরুত্বপূর্ণ খালের মুখগুলো ভরাট হওয়াকে দায়ী করেছেন।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আমাদের আতংকের নাম জলাবদ্ধতা। গত বছর বাজারের ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে কাঁচা ও ভোগ্যপণ্যসহ প্রায় শতকোটি টাকার মালপত্র নষ্ট হয়ে যায়। তারা বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের প্রায় প্রতিটি সড়কে চার-পাঁচ ফুট পানি জমে। যা গত ২৪ বছরে এটা বাজারে সর্বোচ্চ পানি।

ইহ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর