ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজান মা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চুরির অভিযোগ পেয়ে কিশোর বয়সী ছেলের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন মা। শাসন করতে গিয়ে মায়ের বেদম পিটুনিতে প্রাণ যায় ছেলের। সেই খুনের ঘটনা আড়াল করতে ছেলের মরদেহ বাসার চালের লোহার রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজান মা। এরপর তিনি প্রতিবেশী ও পুলিশকে জানান, তার ছেলে আত্মহত্যা করেছে।
এ কাজে মাকে সহযোগিতা করেছে তার ভাই অর্থাৎ নিহতের মামা। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত হয়ে মা ও মামাকে গ্রেফতার করে। এরপরই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হয়।
সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। পরদিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই মা।
চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত মো. হাছান (১৪) নগরীর পাহাড়তলি থানার ওয়্যারলেস কলোনি এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেনের ছেলে। তাদের বাড়ি মাগুরা জেলায়।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন: হাছানের মা কুলসুম বেগম (৩৮) ও মামা ফারুক ইসলাম (২৪)।
পুলিশ জানায়, হাছানের বাবা বেলালের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি আল হেরা মসজিদ গলিতে আলাদা বাসায় বসবাস করেন। ভাই ফারুকও পাশাপাশি আরেক বাসায় থাকেন।
মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে কুলসুমের ভাই ফারুক ভগিনীপতি বেলালের বাসায় গিয়ে জানায়, ছেলে হাছান গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে বেলাল দ্রুত কুলসুমের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আছে। এর আগেই স্থানীয় লোকজন বিষয়টি পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে ঘটনার তদন্তে নামে আকবর শাহ থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা তথ্য পাই, হাছান বাসার চালের ভেন্টিলেটরে লোহার রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আলামত দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন আমরা কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।’
কুলসুম জানান, গত রোববার হাছান কুলিং কর্নারে তার মামা নুরনবী ইসলাম সোহেলের মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে শহরে মায়ের বাসায় চলে আসে। সোহেল বিষয়টি কুলসুমকে জানানোর পর তিনি ক্ষুব্ধ হন। সোমবার রাত ১১টার দিকে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে বেদম মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দেন। এতে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়। এতে রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে হাছান। ছেলের সাড়াশব্দ না পেয়ে কুলসুম ভয় পেয়ে যান।
ওসি ওয়ালী উদ্দিন আরও বলেন, ‘ভয় পেয়ে কুলসুম তার ভাই ফারুককে ডেকে আনেন। তখন দুজনে খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে সেটা প্রচারের পরিকল্পনা করেন। দুজন মিলে হাছানের মরদেহ বাসার ভেন্টিলেটরের লোহার রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। রাত পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ তারা বাসার বাইরে এসে চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। প্রতিবেশী আসমা আক্তার এলে তাকে বাসার বাইরে রেখে দরজার ফাঁক দিয়ে ওড়না কেটে মরদেহ নিচে নামায়। একজন চিকিৎসককেও ডেকে আনা হয়। তিনি এসে হাছানকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এ ঘটনায় বেলাল হোসেন বাদী হয়ে কুলসুম ও ফারুককে আসামি করে আকবর শাহ থানায় মামলা করেন। এরপর কুলসুম ও ফারুককে তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার কুলসুম ও ফারুককে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। কুলসুম হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
চখ/জুইম