chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সের খড়গ; নাসিবের উদ্বেগ

চট্টলা ডেস্ক : করোনার কারণে দুই বছর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। এত দীর্ঘ সময় দোকানপাট বন্ধ থাকায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। বড় ব্যবসায়ীরা নানান সহায়তা প্যাকেজ পেলেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত থেকে গেছেন।

এর মাঝে আবার সরকারের নতুন পদক্ষেপ ক্ষুদ্র প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে প্রস্তুত করা খসড়ায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ছাড়া তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নির্দেশ অমান্যে প্রথমবার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং পরে দ্বিগুণ হারে জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব ও পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ নাসিব চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি এ এস এম আব্দুল গফফার মিয়াজী।

আজ রবিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে নাসিব চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

চট্টগ্রাম কাগজ সম্পাদক ও নাসিব নেতা এ এস এম আব্দুল গফফার মিয়াজী বলেন, অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকান চালানো কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। কিছু দিন পরপর জায়গা পরিবর্তন করতে হয়। আবার বহু বিক্রেতা ভাসমান। তাদের পক্ষে হোল্ডিং নম্বর দিয়ে লাইসেন্স নেয়া অবাস্তব।

বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ নিম্ন আয়ের খুচরা বিক্রেতা আছে, যার অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাসমান দোকানি। ফলে এই ধারা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, অযৌক্তিক কোনো নির্দেশনা ছাপিয়ে দিয়ে ক্ষুদ্র প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করা যাবে না। যৌক্তিক নির্দেশনা দিতে হবে।

যিনি কোরোসিন বিক্রি করেন খুচরা পর্যায়ে তাকে কী বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স নিতে হয়? যিনি দোকানে স্যালাইন বিক্রি করেন তাকে কী ওষুধ প্রশাসনের লাইসেন্স নিতে হয়? তাহলে খুচরা সিগারেট বিক্রির বেলায় কেন আলাদা লাইসেন্সে প্রসঙ্গ আসবে?

লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হলে নিম্ন আয়ের খুচরা বিক্রেতাদের ব্যবসায় খড়গ পড়বে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে এবং দৈনিক জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি আইনের অপপ্রয়োগ ও মাঠপর্যায়ে হয়রানির সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, খসড়া আইনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এই পরিমাণ আয় তো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কয়েক মাস মিলেও হয় না। এমন বিধান করা হলে ব্যবসা বন্ধ করে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

এমনিতেই করোনায় ক্ষুদ্র শিল্প সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আর ব্যবসায় ফিরতে পারেননি। এই হার প্রায় ১০ শতাংশ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করা সুযোগ খুব কম।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর এমনিতেই নানা বোঝা আছে জানিয়ে আবদুল গফ্ফার মিয়াজী বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ওপর করের বোঝা ব্যাপকভাবে চাপানো হয়েছে।

এমনভাবে কর ও ভ্যাটের জাল বাড়ানো হয়েছে যাতে দেশের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও করের আওতায় চলে আসছেন। একই সঙ্গে ব্যবসার জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহের কার্যক্রমেও নানা ধরনের করের পরিমাণ ও আওতা বাড়ানো হয়েছে।

ব্যবসা করতে গেলে সবার আগে নিতে হয় একটি ট্রেড লাইসেন্স। প্রতিবছর এটি নবায়ন করতে হয়। আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় নির্ধারিত ফির বিপরীতে ৫০০ টাকা উৎসে কর দিতে হতো।

প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে এটি ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। এভাবে নানা করের বোঝাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি নুরুল আজম খান, সহ সভাপতি ইন্জিনিয়ার সেলিম,পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম,এম এ হোসেন।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর