চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর দেশে গবেষণার প্রয়োজনঃ প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর আমাদের দেশে গবেষণার একান্ত প্রয়োজন উল্লেখ করে চিকিৎসকদের কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের জন্য গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন, সে দিকে নজর দেয়ার জন্য আমি সবাইকে আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু এবং প্রকৃতির সঙ্গে অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেগুলো থেকে মানুষকে মুক্ত করাও আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি উদাহারণ দেন জাতির পিতা সে সময় এই অঞ্চলে মারাত্মক আকারে দেখা দেয়া কলেরা নিরাময়ে আইসিডিডিআর’বি প্রতিষ্ঠা করে সেটাকে একটি উন্নতমানের প্রতিষ্ঠানে পরিনত করে যান। তাঁর সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে এর আরো উন্নয়ন করে। ফলে এই অঞ্চল কলেরার প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি পেয়েছে। পাশাপাশি পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের টিকা দিয়ে শিশুকাল থেকেই মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।
আমাদের দেশের চিকিৎসকরা মেধাবী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকারা যদি বিদেশে গিয়ে এত ভাল করতে পারেন, তাহলে দেশে করবেন না কেন। আমাদের চিকিৎসরা দেশে যেন তাঁদের মেধার যথাযথ বিকাশ ঘটাতে পারেন সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য যত রকম সহযোগিতা প্রয়োজন আপনারা পাবেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিসিপিএস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাহিদ মালেক বিসিপিএসের সুবর্ণ জয়ন্তীর ফেলোশিপ ও স্মারকচিহ্ন গ্রহণ করেন। পরে, জাহিদ মালেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের বিসিপিএস ফেলোদের মধ্যে স্বর্ণ পদক এবং দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে সম্মানসূচক ফেলোশিপও তুলে দেন।
বিসিপিএস সভাপতি অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিপিএসের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এএইচএম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আগত বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বিসিপিএস সচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ বিল্লাল আলম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিপিএসের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিসিপিএসের থিম সংং এবং বিসিপিএসের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
করোনাকালিন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি চিকিৎসক সমাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ জন্যই তাঁর সরকার মৃত্যুর সংখ্যা একটা সীমার মধ্যে রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। চিকিৎসকদের এই সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে গিয়ে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি তাঁদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিসিপিএস-এর ফেলোশিপ পাওয়াটা অত্যন্ত সম্মানের। যাঁরা সম্মানিত ফেলো এবং মেম্বারগন এখানে উপস্থিত আছেন সবার কাছে আমার এটাই আহবান- দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আপনারা কাজ করে যাবেন।
তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে এইটুকু বলতে পারি যত ধরনের সহযোগিতা দরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা আপনারা আমার কাছ থেকে পাবেন। এটুকু আমি আপনাদের কথা দিতে পারি। তিনি বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখছেন এবং আমি মনে করি একসঙ্গে কাজ করলে মত বিনিময়ের মাধ্যমে অনেক নতুন অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করা যায়। যা দেশের এবং মানুষের কাছে লাগে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় এটাই লক্ষ্য আমাদের দেশের মানুষ সবসময় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাবে সেটাই আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং সেটা আমরা করে যাব।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে আরো ৩টি মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রত্যেকটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা তাঁর সরকারের লক্ষ্য। পাশাপাশি সারাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ যথেষ্ট পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। চিকিৎসার মানোন্নয়ন এবং রোগীর সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই বিষয়টা আপনাদের দেখতে হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসাটা যেন আমাদের দেশের মানুষ পেতে পারে। যদিও আমাদের দেশের লোকসংখ্যা অনেক বেশি, রোগীর চাপ অনেক বেশি তারপরেও আমি বলবো বিষয়টি দেখা দরকার। এ সময় অনলাইন ভিত্তিক বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থাটা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে আরো উন্নত করার পরিকল্পনা তাঁর সরকারের রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, লোকজন নিজ নিজ উপজেলায় বসেই যেন বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা পেতে পারে, সে সুযোগও আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, তাঁর সরকার খাদ্য-পুষ্টির নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি জনগণকে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত রাখতে সচেতনতামুলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সঠিক রোগ নির্ণয় এবং মানুষের মাঝে রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের অসংক্রমক রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আর জানিনা কেন ইদানিং ক্যান্সার এবং কিডনী রোগের প্রাদুর্ভাবটা বেড়ে গেছে। এসব রোগ থেকে মুক্ত থাকার বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জ্ঞান দান করা প্রয়োজন। সেটা যেমন আপনারা করতে পারেন তেমনি এই সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রত্যেক বিভাগেই এই বিষয় ভিত্তিক একটি করে হাসপাতাল তৈরি করবো। আর জেলা হাসপাতালগুলোতে কিডনী ডায়ালাইসিস এবং হৃদরোগের চিকিৎসা যাতে হতে পারে সে পদক্ষেপও আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি।
সরকার প্রধান বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি আমি কিন্তু মানবতাবোধ নিয়েই এদেশের মানুষকে সেবা করে যাবো, আমার মতো করে আমি সেই সেবাই মানুষকে দিয়ে যাচ্ছি। ‘ক্ষমতা তাঁর কাছে একটি সুযোগ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে মূল লক্ষ্য জনগণের সেবা করা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোগ বিলাসে গা ভাসিয়ে দেয়া নয়। কাজেই আপনারাও যে যেখানে যে পেশাতেই থাকেন আপনারা মানবতাবোধ নিয়ে মানুষের পাশে থাকবেন, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: বাসস।
ইহ//চখ